ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সরাসরি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, হামলার পরপরই মূল আসামিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
হামলার পরের চিত্র
গত শুক্রবার ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা অবস্থায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। মোটরসাইকেলে করে হামলাকারীরা তাকে অনুসরণ করে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়। এ ঘটনায় র্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের কেউই সরাসরি শুটার নয়।
কারা গ্রেপ্তার হয়েছে
রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানব পাচার চক্রের দুই সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী। র্যাব জানায়, ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া ও শ্যালক শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং বান্ধবী মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাদের ঘন ঘন ফোনে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
হামলাকারীদের পালানোর পথ
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, ফয়সাল করিম মাসুদই হাদির ওপর গুলি চালানো শুটার এবং আলমগীর শেখ মোটরসাইকেল চালক। তারা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান গোপন রাখে। হামলার পর দুজনই ঢাকা ছাড়ে এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে প্রবেশ করে। তদন্তকারীদের মতে, তারা ধাপে ধাপে সীমান্তে পৌঁছায়।

ইমিগ্রেশন তথ্য নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সন্দেহভাজনদের বিদেশে পালানোর বিষয়ে ইমিগ্রেশন ডেটাবেইসে কোনো তথ্য নেই। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফয়সাল সর্বশেষ জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন এবং এরপর বৈধভাবে দেশ ছাড়ার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
মানব পাচার চক্রের যোগসূত্র
তদন্তে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা থেকে মানব পাচার চক্রের দুই সদস্য সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসমকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা মূল হামলাকারীদের সীমান্ত পার হতে সহায়তা করেছে। তাদের মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও সফলতা আসেনি।
সহযোগী ও মোটরসাইকেল মালিক
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে ঢাকার অদূরের একটি উপজেলা থেকে মো. মিলন ও হাবিবুর রহমান হাবিব নামে দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার দিন তাদের সঙ্গে হামলাকারীদের শতাধিকবার ফোনালাপ হয়। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তিনি দাবি করেছেন, মোটরসাইকেলটি আগেই একটি শোরুমে বিক্রি করেছিলেন।
ভারতের প্রতি কূটনৈতিক আহ্বান
হামলাকারীরা ভারতে পালিয়ে থাকলে তাদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না এবং বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















