সিডনির বন্ডি বিচে হনুকা উৎসবের রাতে মুহূর্তেই আনন্দের আবহ বদলে যায় বিভীষিকায়। গুলির শব্দে ছুটোছুটি, রক্তে ভেসে যাওয়া বালুকাবেলা আর আতঙ্কে পরিবার খোঁজার আর্তনাদ—এই দৃশ্যই এখন স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ের স্মৃতিতে গেঁথে আছে। রবিবার রাতে হওয়া এই হামলায় অন্তত এগারো জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারীও রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের ভাষ্যে উঠে এসেছে ভয়াবহতার চিত্র
হনুকা উদযাপনে অংশ নিতে আসা অস্ট্রেলীয়–ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী আরসেন অস্ট্রোভস্কি হামলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই তার চিকিৎসা করা হয়। তিনি বলেন, চারদিকে শুধু বিশৃঙ্খলা। কোথা থেকে গুলি আসছে বোঝা যাচ্ছিল না। নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখেছেন, মানুষের শরীরে গুলি লাগতে দেখেছেন, মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন। তার একমাত্র চিন্তা ছিল সন্তান আর পরিবারের খোঁজ। কিছু সময় বিচ্ছিন্ন থাকার পর তিনি পরিবারকে নিরাপদ অবস্থায় পান।

বন্ডি বিচে রক্তের বন্যা
অস্ট্রোভস্কির ভাষায়, তিনি শিশুদের পড়ে যেতে দেখেছেন, বৃদ্ধদের আহত হতে দেখেছেন, অসহায় মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছেন। চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ভ্লাদ, যিনি জরুরি সেবাদানকারী দলের সঙ্গে যুক্ত, বলেন, চারদিকে মৃতদেহ পড়ে ছিল—তরুণ, বৃদ্ধ, ধর্মগুরু কেউ রেহাই পাননি। তিনি নিজের আট বছর বয়সী ছেলেকে শরীর দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তার ভাষায়, যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা অপরিচিত কেউ নন, সবাই নিজেদের কমিউনিটির মানুষ।
ধর্মগুরুর মৃত্যুতে শোক আরও গভীর
হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এলি শ্লাঙ্গার নামে এক ধর্মগুরু। প্রায় আঠারো বছর আগে তিনি বন্ডি বিচে এসে কমিউনিটির সেবায় যুক্ত হন। পাঁচ সন্তানের জনক শ্লাঙ্গারের সবচেয়ে ছোট সন্তানটির বয়স মাত্র দুই মাস। সহকর্মীরা বলেন, তিনি ছিলেন নীরবে কাজ করা মানুষ, যিনি উৎসবের আয়োজন থেকে শুরু করে শিশুদের আনন্দের দিকটি সবসময় আগলে রাখতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে স্মরণ করে লেখা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, এক শান্তিপূর্ণ হনুকা অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তার প্রাণ গেল।
ইহুদি কমিউনিটিতে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ
সিডনিতে প্রায় চল্লিশ হাজার ইহুদি বাস করেন, যা অস্ট্রেলিয়ার মোট ইহুদি জনসংখ্যার বড় অংশ। হনুকার প্রথম রাতে প্রায় এক হাজার মানুষ বন্ডি বিচে জড়ো হয়েছিলেন। এই হামলা শুধু প্রাণহানিই নয়, বরং নিরাপত্তা ও সহাবস্থানের প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















