মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতি শুধু অর্থনীতি ও অভিবাসন ব্যবস্থাকেই পাল্টে দিচ্ছে না, একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাট দলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের নতুন মুখ তৈরি করছে। দুই হাজার আটাশ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য এই রাজনৈতিক পরিবেশ এক ধরনের লঞ্চপ্যাড হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট গভর্নর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েই নিজেদের জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করে তুলছেন।
ট্রাম্পবিরোধিতা থেকে জাতীয় পরিচিতি
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম, ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার এবং মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে নিজেদের দলের সমর্থকদের একত্র করছেন। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে স্পষ্ট রাজনৈতিক বৈপরীত্য তৈরি করে তারা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছেন।
ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান, ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত শহরে কড়াকড়ি অভিযান এবং কেন্দ্রীয় ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সেই বিরোধিতাই এখন অনেক গভর্নরের কাছে রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে উঠেছে।
নিউসমের কৌশল, প্রিটজকারের অবস্থান
গ্যাভিন নিউসম ট্রাম্পের কংগ্রেসনাল সীমানা পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ায় গণভোটে সমর্থন আদায় করে বড় সাফল্য পেয়েছেন। এর ফলে আসন্ন কংগ্রেস নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অতিরিক্ত আসন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সাফল্যের পর তিনি টেক্সাসের হিউস্টনে ডেমোক্র্যাটদের সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও দৃশ্যমান করে তোলেন।
ইলিনয়ের গভর্নর প্রিটজকার ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেকে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর রক্ষক হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনি সম্প্রতি স্কুল ও আদালত প্রাঙ্গণে ফেডারেল গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করে আইন স্বাক্ষর করেছেন। পাশাপাশি নিউ হ্যাম্পশায়ার ও মিনেসোটায় ডেমোক্র্যাট সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে দলকে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ওয়েস মুরের পাল্টা পদক্ষেপ
মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা কমানোর উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন। সরকারি অচলাবস্থার সময় তিনি মেরিল্যান্ডে পূর্ণ খাদ্য সহায়তা পুনর্বহাল করেন এবং দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নামেন। তার ভাষায়, এটি ট্রাম্প নীতির সরাসরি জবাব।
দলীয় প্রত্যাশা ও ট্রাম্পের পাল্টা আক্রমণ
কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাট দলে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, এসব গভর্নরের সক্রিয়তায় সেখানে নতুন উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। দলীয় কৌশলবিদদের মতে, ডেমোক্র্যাট ভোটাররা এখন সবচেয়ে বেশি চান ট্রাম্পের ওপর রাজনৈতিক লাগাম।
এই উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পও আক্রমণ জোরদার করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে নিউসমকে ব্যঙ্গ করে ডাকছেন, প্রিটজকারকে কটাক্ষ করছেন এবং মুরকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে অভিযুক্ত করছেন। রিপাবলিকানদের বক্তব্য, এসব গভর্নর মূলধারার ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন।
দুই হাজার আটাশের দৌড় আরও বিস্তৃত
নিউসম, প্রিটজকার ও মুর ছাড়াও মিশিগানের গ্রেচেন হুইটমার, পেনসিলভানিয়ার জশ শাপিরো ও কেন্টাকির অ্যান্ডি বেসিয়ারকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের আক্রমণের কেন্দ্রে না থাকায় তারা এখনো একই মাত্রার জাতীয় মনোযোগ পাচ্ছেন না।
নিউসম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পকে বিদ্রূপ করে নিয়মিত ভাইরাল পোস্ট দিচ্ছেন। দক্ষিণ ক্যারোলিনা সফর ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে সক্রিয় উপস্থিতিও তার জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে মুর ও প্রিটজকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে ধারাবাহিকভাবে ডেমোক্র্যাট সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর শাসনশৈলীই এখন ডেমোক্র্যাট দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের পটভূমি তৈরি করছে। দুই হাজার আটাশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথে এই সংঘাতই ডেমোক্র্যাট রাজনীতির নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।
#ট্রাম্প #ডেমোক্র্যাট #মার্কিনরাজনীতি #দুইহাজারআটাশনির্বাচন #গভর্নররাজনীতি #হোয়াইটহাউস #যুক্তরাষ্ট্র
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















