বুলগেরিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা আর বারবার সরকার পরিবর্তনের ক্লান্তির ভেতর নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। রাজধানী সোফিয়াসহ বিভিন্ন শহরে টানা বিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রোজেন ঝেলিয়াজকভ। ইউরোপে এই প্রথম জেন জি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের চাপে কোনো সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হলো, যা দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
সামাজিক মাধ্যম থেকে রাজপথে তরুণদের উত্থান
একসময় যেসব তরুণ সামাজিক মাধ্যমে শুধু বিনোদন খুঁজতেন, এখন তারাই সেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন রাজনীতি বোঝার জন্য। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো মাধ্যমে সক্রিয় প্রচার, দ্রুত তথ্য ছড়ানো আর ব্যাপক অংশগ্রহণ তরুণদের রাজপথে নামতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সোফিয়ার এক তরুণ বিপণনকর্মী কনস্তানতিন তুজহারভ বলেন, এত অল্প সময়ে আন্দোলনের এমন প্রভাব দেখে নিজেরাই বিস্মিত। অনেকের কাছে এটি ছিল প্রথম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, এক ধরনের নাগরিক দীক্ষা।
বারবার নির্বাচন, তবু অনিশ্চয়তা
গত চার বছরে সাতটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বুলগেরিয়াকে করেছে রাজনৈতিকভাবে নড়বড়ে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর আবারও নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও কবে ভোট হবে, তা এখনও ঠিক করেননি প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্বাচনই হবে আসল পরীক্ষা। ভোটার উপস্থিতি বাড়লে বোঝা যাবে, তরুণদের আন্দোলন কেবল রাজপথে নয়, ব্যালট বাক্সেও প্রভাব ফেলতে পারছে।

দুর্নীতি আর আস্থাহীনতার পটভূমি
দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক অকার্যকারিতা আর রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক টানাপোড়েনে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় রাজনীতি বিশ্লেষক দিমিতার বেচেভ বলেন, সাম্প্রতিক বিক্ষোভের আবেগ ও ব্যাপ্তি অতীতের সব আন্দোলনকে ছাপিয়ে গেছে। তবু পরিবর্তন কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে নির্বাচনী অংশগ্রহণের ওপর।
জেন জির সংখ্যা ও প্রভাব
সরকারি হিসাবে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় তেরো শতাংশ জেন জি প্রজন্ম। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক আস্থা দীর্ঘদিন ধরেই কম। সাম্প্রতিক জরিপে সরকারের প্রতি আস্থা ছিল মাত্র উনত্রিশ শতাংশ। সর্বশেষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন যোগ্য ভোটারের প্রায় ঊনচল্লিশ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, হতাশা স্থির অবস্থায় থাকলেও মানুষ এখনো পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।
আন্দোলনের সূত্রপাত ও বিস্তার
সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও সামাজিক নিরাপত্তা অবদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি, রুশঘেঁষা রাজনীতিকদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্নে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তরুণদের মধ্যে এই মনোভাব আরও জোরালো হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
পরিবর্তনের পথে চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক অভিজাতদের সরানো সহজ হবে না। তবু তরুণদের ক্ষোভ আর সক্রিয়তা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াবে, এমন প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। প্রশ্ন একটাই, রাজপথের এই শক্তি কি ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















