অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হানুকা উদযাপনের সময় ভয়াবহ বন্দুক হামলায় অন্তত পনেরো জন নিহত এবং চল্লিশের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় বন্ডাই সমুদ্রসৈকতের একটি পার্কে ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই হামলাকে দেশটির কর্তৃপক্ষ সরাসরি সন্ত্রাসী আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে সতর্কবার্তা উপেক্ষিত থাকার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ইহুদি নেতারা।
হানুকার আনন্দে নেমে আসে শোক
প্রথম রাতের হানুকা উপলক্ষে বিকেল পাঁচটার দিকে বন্ডাইয়ের একটি খেলার মাঠের পাশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ দুই বন্দুকধারী ভিড় লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে উৎসবের পরিবেশ আতঙ্কে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি আলাদা অবস্থান থেকে একের পর এক গুলি ছুড়ছেন এবং মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছে।

পরিবার নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই
সিডনির রাব্বি মোশে গুটনিক তার পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, গুলির শব্দ শুরু হতেই তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি পিকনিক টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন। তার ভাষায়, চারপাশে মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। নিহতদের মধ্যে তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একজন সহকর্মীও রয়েছেন। ঘটনাকে তিনি ভাষায় প্রকাশের অতীত বলে উল্লেখ করেন।
পুলিশি অভিযান ও হামলাকারীদের পরিণতি
ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, হামলাকারীরা একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে গুলি চালায়। পরে একজন সাহসী প্রত্যক্ষদর্শী সামনে এগিয়ে এসে এক বন্দুকধারীকে নিরস্ত্র করতে সক্ষম হন। পুলিশের দ্রুত অভিযানে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনাস্থলে সক্রিয় বিস্ফোরকও উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিহত হন এবং অপরজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা জোরদার
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই হামলাকে প্রায় তিন দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসের নগ্ন প্রকাশ। হামলার পর অস্ট্রেলিয়া জুড়ে সিনাগগ ও ইহুদি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।
বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষের প্রেক্ষাপট
গত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে ইহুদিবিদ্বেষী হামলা ও হুমকি বেড়েছে। সিনাগগে আগুন দেওয়া, ইহুদি পাড়ায় গ্রাফিতি ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগেই সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষয়ে যাওয়ার সতর্কতা দিয়েছিল। ইহুদি নেতারা বলছেন, এই হামলা শুধু একটি সম্প্রদায়ের ওপর নয়, পুরো সমাজের জন্যই বড় সতর্কবার্তা।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ঐক্যের আহ্বান
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, তাদের এক নাগরিক আহতদের মধ্যে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, এখন বিভক্তির সময় নয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই এই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা হবে।


সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















