ঢাকার শাহবাগ মোড়ে গত রাতের হাড়কাঁপানো শীত আর ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার রাতভর শাহবাগ অবরোধ করে তারা শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকে।
গত রাতের এই কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ অংশ নেন। স্লোগান, বক্তব্য ও কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। শাহবাগ চত্বরে এক ধরনের আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে ক্ষোভ, শোক আর বিচারের আকাঙ্ক্ষা একসঙ্গে প্রকাশ পায়।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের রাতে শাহবাগে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, তারা পুরো রাত এখানেই থাকবেন। ঠান্ডার কারণে কম্বল আনার ব্যবস্থার কথাও জানান তিনি। তার ভাষায়, হাদি জীবিত থাকাকালে অসহায় মানুষের জন্য এসব কম্বল কিনেছিলেন, কিন্তু বিতরণ করার সুযোগ পাননি। কর্মসূচি শেষে সেই কম্বল অসহায়দের মাঝে দেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় সকাল থেকে পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সে বিষয়টি তারা নজরে রাখবেন। তবে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে না বলে স্পষ্ট করে দেন তিনি।
শুক্রবার দুপুর থেকেই শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ইনকিলাব মঞ্চ। হাদির হত্যার বিচার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই অবরোধ পালন করা হয়। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক আহ্বানে সারা দেশের মানুষকে শাহবাগে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
প্রতিবাদ চলাকালে ইনকিলাব মঞ্চ হাদির কফিনের একটি ছবি প্রকাশ করে, যা উপস্থিত অনেকের মধ্যে আবেগের সৃষ্টি করে। মঞ্চের এক সদস্য মোহাম্মদ শাহীন কবিতা পাঠ করলে মুহূর্তেই তা প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে।
হাদি ছিলেন গত জুলাইয়ের গণআন্দোলনে সক্রিয় এক সংগঠক। গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে তিনি দ্রুতই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে তার সরব অবস্থান তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন।
শাহবাগে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, হাদির হত্যার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। তার ভাষায়, এই অবরোধ চলমান থাকবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।
গত রাতের এই ঘটনাপ্রবাহ শাহবাগকে আবারও পরিণত করে প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে শীতের রাতেও থেমে থাকেনি বিচার দাবির আওয়াজ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















