শিশুদের পড়া শেখানোর বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা বহু দূর এগোলেও বাস্তব শ্রেণিকক্ষে তার প্রতিফলন খুবই সীমিত। ফলে যেসব শিশু ডিসলেক্সিয়ায় ভুগছে, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই সংকট নতুন নয়, বরং দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল। দ্য নিউ ইয়র্কারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সঠিক পদ্ধতি জানা থাকার পরও কেন স্কুলগুলো সেই পথে হাঁটে না
ডিসলেক্সিয়া কী এবং কেন এটি জটিল
ডিসলেক্সিয়াকে অনেকেই অক্ষর উল্টো লেখা বা পড়ার সমস্যা বলে ভাবেন। বাস্তবে এটি আরও গভীর। এই অবস্থায় থাকা মানুষদের শব্দ উচ্চারণ, নতুন শব্দ মনে রাখা, ছন্দ বোঝা এবং লিখিত বিষয় অনুধাবনে ভিন্ন মাত্রার অসুবিধা হয়। ভাষা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে শেখা যায়, কিন্তু পড়া ও লেখা মানুষের মস্তিষ্কের জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়, তাই সঠিক নির্দেশনা ছাড়া অনেক শিশুই পিছিয়ে পড়ে।
শ্রেণিকক্ষে ভুল শিক্ষা দর্শন
বিজ্ঞানভিত্তিক পঠন-পদ্ধতির বদলে বহু স্কুলে এখনও অনুমাননির্ভর পড়াশোনা শেখানো হয়। শিশুদের বলা হয় ছবি বা বাক্যের প্রেক্ষাপট দেখে শব্দ আন্দাজ করতে। গবেষণা বলছে, এতে দুর্বল পাঠকের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। শব্দ ভাঙা, ধ্বনি ও অক্ষরের সম্পর্ক শেখানো ছাড়া দক্ষ পাঠক তৈরি সম্ভব নয়।

ভুল পদ্ধতির সামাজিক মূল্য
যেসব শিশু পড়তে পারে না, তারা প্রায়ই শাস্তি, অপমান এবং আত্মবিশ্বাস হীনতায় ভোগে। গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার ঘাটতি থাকা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি এবং পরবর্তী জীবনে অপরাধ প্রবণতার ঝুঁকিও বাড়ে। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক হস্তক্ষেপ এই ক্ষতি ঠেকাতে পারে।
সফলতার উদাহরণ আছে
যেসব স্কুল ও অঙ্গরাজ্য বিজ্ঞানসম্মত পঠন-পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, সেখানে ফল চোখে পড়ার মতো। কাঠামোবদ্ধ সাক্ষরতা শিক্ষা, নিয়মিত অনুশীলন এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকলে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো অগ্রগতি করতে পারে। নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষায়িত বিদ্যালয়গুলো প্রমাণ করেছে, সঠিক পদ্ধতি থাকলে পরিবর্তন সম্ভব।
আগাম শনাক্তকরণই মূল চাবিকাঠি
বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়ার সমস্যা যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, ততই সমাধান সহজ হয়। পরিবারে ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি। তাই কিন্ডারগার্টেন থেকেই শিশুদের পড়ার ঝুঁকি যাচাই শুরু হলে ভবিষ্যতের বড় ক্ষতি এড়ানো যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















