জাপানে কিমোনো এখন আর দৈনন্দিন পোশাক নয়। উৎসব, বিয়ে কিংবা বিশেষ আচারেই সীমাবদ্ধ তার উপস্থিতি। তবে এই বাস্তবতাকে ভেঙে দিতে চাইছেন কানাডীয় উদ্যোক্তা অ্যারন বেনজামিন। জাপানের ঐতিহ্যবাহী কিমোনোর কাপড়কে আধুনিক পাশ্চাত্য পোশাকে রূপ দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এক ব্যতিক্রমী বিলাসবহুল ব্র্যান্ড। তার লক্ষ্য কেবল ফ্যাশন নয়, বরং জাপানি বস্ত্রশিল্পের সৌন্দর্য ও ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবনে ফিরিয়ে আনা
কিমোনো থেকে অনুপ্রেরণার শুরু
কানাডা ও জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষা অধ্যয়ন এবং পরে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার পর টোকিওতে কাজ করছিলেন অ্যারন বেনজামিন। ২০১৮ সালে কিয়োতো সফরের সময় এক বৃদ্ধা নারীর ব্যক্তিগত কিমোনো সংগ্রহের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ঘরের তাতামি কক্ষে সাজিয়ে রাখা প্রতিটি কিমোনোর গল্প শোনাতে শোনাতে সেই নারী একসময় পুরো সংগ্রহ বিক্রির প্রস্তাব দেন। অল্প মূল্যে কেনা সেই কিমোনোগুলোই পরবর্তী সময়ে বেনজামিনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং নতুন ভাবনার বীজ বপন করে
টরন্টো থেকে টোকিও, স্বপ্নের বিস্তার
কিমোনো সংগ্রহ নিয়ে টরন্টো ফিরে বেনজামিন ঘর থেকেই কাজ শুরু করেন। শুরুতে পুরোনো কিমোনো ভেঙে গলার টাই ও ছোট আনুষঙ্গিক তৈরি হয়। ধীরে ধীরে তিনি বড় ব্র্যান্ডের লোগো আর ফাঁপা জৌলুসে বিরক্ত হয়ে নিজের দর্শনকে রূপ দেন এক নতুন নাম ও পরিচয়ে। জাপানি দর্শন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্র্যান্ডের নাম রাখা হয় ইচিজিকু, যার অর্থ এক অটল অক্ষ। ২০১৯ সালে ব্যবসা টোকিওতে স্থানান্তরিত হয় এবং পরে ইয়োয়োগি-উএহারায় গড়ে ওঠে একটি গ্যালারি ও বিক্রয়কেন্দ্র
কাপড়ই এখানে শিল্পকর্ম
ইচিজিকুর মূল আকর্ষণ কিমোনোর কাপড়ের রোল বা তানমোনো। অঞ্চল, নকশা, রং, বুনন, উজ্জ্বলতা ও ভারসাম্যের দিক থেকে এই কাপড়গুলোর বৈচিত্র্য অসাধারণ। বেনজামিনের মতে, প্রতিটি কাপড় নিজেই এক একটি শিল্পকর্ম। গ্যালারিতে ঢুকলে ক্রেতারা যেন একটি বস্ত্র শিল্প প্রদর্শনীতে প্রবেশ করেন, যেখানে পোশাক তৈরি হয় শিল্পকে পরিধেয় রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়ায়

হোশি ব্লেজার ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
ইচিজিকুর সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হোশি নামের ব্লেজার। পুরো স্যুটের বদলে কেবল জ্যাকেট তৈরির সিদ্ধান্ত আসে কাপড়ের সীমাবদ্ধতা ও টেকসই ব্যবহারের কথা ভেবে। ক্রেতাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে গ্যালারি ভিজিট, কাপড় বাছাই, জাপানি মিষ্টান্ন ও চায়ের সঙ্গে গল্পের মধ্য দিয়েই শুরু হয় পোশাক তৈরির অভিজ্ঞতা। এরপর ওসাকা ও গানমার কারিগরদের হাতে তৈরি হয় সেই বিশেষ পোশাক, যা কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর হাতে পৌঁছে যায়
দাম, ক্রেতা ও দর্শন
এই ধরনের পোশাকের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তবে ইচিজিকুর ক্রেতাদের বড় অংশ বিদেশি সংগ্রাহক ও জাপানে বসবাসরত অভিজাত শ্রেণীর মানুষ। বেনজামিনের মতে, তার লক্ষ্য বড় মুনাফা নয়। কিমোনো বস্ত্র শিল্পের সৌন্দর্যকে নথিবদ্ধ করা ও বিশ্ববাসীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















