মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় পাঁচ বছর পর আয়োজিত প্রথম ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। রাজধানী নেপিদোসহ কয়েকটি শহরে ভোটগ্রহণ হলেও দেশজুড়ে এই নির্বাচনকে গণতন্ত্রে ফেরার পথ নয় বরং সামরিক জান্তাকে বৈধতা দেওয়ার এক ধরনের প্রদর্শনী হিসেবেই দেখছেন সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা।
নির্বাচনের দিনে নেপিদোর ভোট কেন্দ্রগুলোতে মানুষের লাইন দেখা গেলেও ভোটারদের চোখেমুখে ছিল ভয় আর অনিশ্চয়তা। অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে বলেছেন, ভোট না দিলে বাড়িতে সেনা আসতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই তারা কেন্দ্রে গেছেন। ভোটের পর আঙুলে কালি লাগানো হলেও তা নাগরিক অধিকার নয় বরং বাধ্যবাধকতার চিহ্ন বলেই মনে করছেন অনেকে।
সামরিক অভ্যুত্থানের ছায়া
দুই হাজার একুশ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে নির্বাচিত নেতৃত্ব উৎখাত হওয়ার পর থেকেই মিয়ানমার গৃহযুদ্ধ ও দমনপীড়নের মধ্যে রয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনে ব্যাপক গ্রেপ্তার, হামলা ও বিমান আক্রমণের অভিযোগ রয়েছে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই বাস্তবতায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সহিংসতা ও দমনমূলক পরিবেশে আয়োজিত বলে বর্ণনা করেছে।

ভোটের মাঠে সেনা সমর্থিত প্রার্থীরা
বিশ্লেষকদের মতে এবারের নির্বাচনে প্রকৃত বিরোধী কণ্ঠ প্রায় অনুপস্থিত। সেনা সমর্থিত দলই সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে এবং তাদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। একসময়ের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতীক পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকায় প্রচারণাও ছিল নীরব ও নিরানন্দ। অতীতের মতো জনসমর্থনের জোয়ার বা রাস্তায় জনসভা দেখা যায়নি।
ভয় আর নীরবতার নগরী
দেশের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে ভোটার উপস্থিতি আগের নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। কেউ কেউ বলেছেন, তরুণরা বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগের ভয়ে নিজেদের নাম তালিকায় না জড়াতে চাইছেন। একজন তরুণের ভাষায়, ভোট দিলেও বা না দিলেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না, জীবনের সবকিছুই এখন সীমাবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও চলমান সংঘাত
পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেও চীন সহ কয়েকটি দেশের সমর্থন পেয়েছে সামরিক সরকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা একে স্পষ্টভাবে সহিংস ও ভীতিকর পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়েছেন। দেশের বহু অঞ্চলে ভোটের দিনও বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণের খবর মিলেছে। বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাত থামেনি।
ভোটের ভবিষ্যৎ ও মানুষের আশঙ্কা
এই নির্বাচন আরও দুই ধাপে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও অনেক নাগরিকই এতে অংশ নিতে অনিচ্ছুক। তাদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া সামরিক শাসনকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে। এক নাগরিকের কথায়, দেশ ক্রমেই অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে, আর এই নির্বাচন সেই অন্ধকারকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















