০৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪০)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪
  • 96

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

বাদানুবাদ হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলতো, কিন্তু বাইরে দাপাদাপি আর হৈ-হল্লার শব্দ পেয়ে মুখ বন্ধ ক’রে উভয়েই উৎকীর্ণ হ’য়ে রইলো সেদিকে। সব কথার শেষ কথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, এইসব কানে আসে। একটা বিক্ষুব্ধ মিছিল দারুণ চিৎকারে দিগ্বিদিক তোলপাড় ক’রে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। দেবো দেবো দেবো দেবো-রক্ত রক্ত রক্ত দেবো, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরাও প্রস্তুত; দ্রুত চেহারা বদলে যাচ্ছে শ্লোগানের।

হঠাৎ ফটাশ ক’রে একটা শব্দ হ’লো।

‘কি ব্যাপার?’

খোকা আর মুরাদ উভয়েই ছুটলো বারান্দায়। একটা চলন্ত রিকশায় মাইক বসানো ছিলো, টায়ার ফাটলো সেটার।

খোকা বললে, ‘বুকটা একেবারে ধড়াশ ক’রে উঠেছিলো!’

‘আমি তো ভেবেছিলাম মলোটভ ককটেল’ মুরাদ উৎসাহিত হ’য়ে বললে, ‘গভর্নর হাউসের গেটের কাছে কালই তো ছুড়েছিলো দুটো।’

মিছিলের কিছু লোক রাস্তার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের দু’একটিতে কাঠবিড়ালীর মতো তরতরিয়ে উঠে পড়েছিলো এক ফাঁকে, ডাল ভেঙে ঝুপঝাপ ক’রে নামিয়ে দিচ্ছিলো তারা। প্রথমে হটোপুটি, তারপর কাড়াকাড়ি; অল্পক্ষণের মধ্যে প্রায় ন্যাড়ামুড়ো দশা দাঁড়ালো গাছগুলোর। বিজয়কেতনের মতো ডালগুলো খাড়া ক’রে মিছিলের অগ্রভাগে ছুটলো আবার।

‘কাল যে কি ঘটবে। সাংঘাতিক একটা কিছু হ’য়ে যেতে পারে কালকের মিটিং-এ।’ খুব চিন্তিত মুখে মুরাদ বললে, ‘বলা নেই কওয়া নেই আচমকা কামান দেগে জেনারেল ডায়ারের মতো মানুষ মারতে পারে টিক্কা খান। শালারা মাল যা এক একখানা। ঘটে অন্য কিছু থাকুক আর নাই থাকুক একটা ব্যাপারে মালগুলোর বেজায় মিল, সব ব্যাটার শুয়োরের গোঁ! আমি চলি!’

‘চলি মানে?’ খোকা ওর হাত চেপে ধরলো।

‘এই মিছিলের সঙ্গেই চ’লে যাই বরং, হাঁটার কষ্টটা টের পাওয়া যাবে না।’ একটু থেমে বিচিত্র হেসে মুরাদ বললে, ‘আর কিছু সঙ্কল- নেরও সদ্গতি হবে এই সুযোগে। ভিতরে যাই থাকুক ঝোঁকের মাথায় ঝটাঝট কিনে নেবে অনেকে’ ‘তুই একটা চিটার! দেশপ্রেমিকরা সবাই যদি তোর মতো চান্স- মোহাম্মদ হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত সবাইকে মুলো চুষতে হবে।’

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪০)

১২:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

বাদানুবাদ হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলতো, কিন্তু বাইরে দাপাদাপি আর হৈ-হল্লার শব্দ পেয়ে মুখ বন্ধ ক’রে উভয়েই উৎকীর্ণ হ’য়ে রইলো সেদিকে। সব কথার শেষ কথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, এইসব কানে আসে। একটা বিক্ষুব্ধ মিছিল দারুণ চিৎকারে দিগ্বিদিক তোলপাড় ক’রে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। দেবো দেবো দেবো দেবো-রক্ত রক্ত রক্ত দেবো, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরাও প্রস্তুত; দ্রুত চেহারা বদলে যাচ্ছে শ্লোগানের।

হঠাৎ ফটাশ ক’রে একটা শব্দ হ’লো।

‘কি ব্যাপার?’

খোকা আর মুরাদ উভয়েই ছুটলো বারান্দায়। একটা চলন্ত রিকশায় মাইক বসানো ছিলো, টায়ার ফাটলো সেটার।

খোকা বললে, ‘বুকটা একেবারে ধড়াশ ক’রে উঠেছিলো!’

‘আমি তো ভেবেছিলাম মলোটভ ককটেল’ মুরাদ উৎসাহিত হ’য়ে বললে, ‘গভর্নর হাউসের গেটের কাছে কালই তো ছুড়েছিলো দুটো।’

মিছিলের কিছু লোক রাস্তার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের দু’একটিতে কাঠবিড়ালীর মতো তরতরিয়ে উঠে পড়েছিলো এক ফাঁকে, ডাল ভেঙে ঝুপঝাপ ক’রে নামিয়ে দিচ্ছিলো তারা। প্রথমে হটোপুটি, তারপর কাড়াকাড়ি; অল্পক্ষণের মধ্যে প্রায় ন্যাড়ামুড়ো দশা দাঁড়ালো গাছগুলোর। বিজয়কেতনের মতো ডালগুলো খাড়া ক’রে মিছিলের অগ্রভাগে ছুটলো আবার।

‘কাল যে কি ঘটবে। সাংঘাতিক একটা কিছু হ’য়ে যেতে পারে কালকের মিটিং-এ।’ খুব চিন্তিত মুখে মুরাদ বললে, ‘বলা নেই কওয়া নেই আচমকা কামান দেগে জেনারেল ডায়ারের মতো মানুষ মারতে পারে টিক্কা খান। শালারা মাল যা এক একখানা। ঘটে অন্য কিছু থাকুক আর নাই থাকুক একটা ব্যাপারে মালগুলোর বেজায় মিল, সব ব্যাটার শুয়োরের গোঁ! আমি চলি!’

‘চলি মানে?’ খোকা ওর হাত চেপে ধরলো।

‘এই মিছিলের সঙ্গেই চ’লে যাই বরং, হাঁটার কষ্টটা টের পাওয়া যাবে না।’ একটু থেমে বিচিত্র হেসে মুরাদ বললে, ‘আর কিছু সঙ্কল- নেরও সদ্গতি হবে এই সুযোগে। ভিতরে যাই থাকুক ঝোঁকের মাথায় ঝটাঝট কিনে নেবে অনেকে’ ‘তুই একটা চিটার! দেশপ্রেমিকরা সবাই যদি তোর মতো চান্স- মোহাম্মদ হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত সবাইকে মুলো চুষতে হবে।’