শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৪৩)

  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

চায়ের ফরমাশ দিয়ে রহমান নুরুদ্দিনের দিকে একটা সিগ্রেট তাক ক’রে আলতোভাবে ছুড়ে দিলো। বললে, ‘তুই তো আর বিপ্লবীদের দেখিসনি, তুই চিনবি কেমন ক’রে। ভিতরে ভিতরে নিশ্চয়ই ও একটা কিছু নিয়ে মশগুল হ’য়ে আছে। আর উপরে উপরে দেখে এসব আন্দাজ করাও খুব সহজ ব্যাপার নয়। এই তো তিন-চারদিন আগে, আমার ছোট ভাইয়ের এক বন্ধু-স্কুল ফাইনাল দেবে ছোঁড়া, বললে লাগবে নাকি আপনার–‘ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে নুরুদ্দিন আকাশ থেকে পড়ার ভান ক’রে বললে, ‘ওই অতটুকু ফচকে ছোঁড়া ওই কথা বলতে পারলে, সর্বনাশ।’

‘আবে শালা, মাগী না মাগী না। চিরকালই তো ফকিরনি হাঁটকে- চটকে বেড়ালি, ওটা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিস না কেন? পিস্তল, পিস্তল, হাতে তৈরি পিস্তল! পকেট থেকে বের ক’রে আমার হাতে দিলো, বললে লাগলে রেখে দিন, এখন আমরা দিনে দুটো ক’রে বানাচ্ছি, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিদিন বিশটার প্রডাকশন হবে। বললাম কাজ হয়, বিচিত্র হেসে আমার হাতে একটা গুলি দিয়ে বললে, আপাতত একটা চারপেয়ে কুত্তা দিয়েই পরখ ক’রে দেখুন!’

মওলা ফোড়ন কেটে বললে, ‘দেশের তাবৎ বিপ্লবীরা রহমানের ছোট ভাইয়ের বন্ধু; ভাগ্যবান বটে আমাদের রহমান। সোর্সটা ওর ভালোই, ভাইয়ের মতো ভাই পেয়েছে একখান্!”

চায়ের কাপে চিনি নাড়তে নাড়তে বরফের মতো ঠাণ্ডা গলায় রহমান বললে, ‘আর যাই হোক ভাইটি আমার কারো দালালি করে না; রিলিফের কাজ পাড়ার সংগঠন এইসব নিয়ে মেতে থাকে।’

মওলা চ’টে উঠলো। বললে, ‘দালালিটা দেখলি কোথায়?’

‘টিভির প্রোগ্রাম প্রডিউসার আবার কি, দালাল নয়?’ যেন তৈরি হয়েই ছিলো উত্তর দেবার জন্যে, এইভাবে বললে রহমান, ‘মৌলিক গণতন্ত্রী চোঙামার্কা ম্যাড়ামার্কা টিপিকে এইচপিকে নিয়ে ভ্যারেন্ডা ভাজতে ভাজতে যখন শালারা বুঝলে হাওয়া খারাপ, অমনি যেদিকে পড়ে পানি সেদিকে ধরো ছাতি ফর্মুলায় গনগনে আঁচে দেশপ্রেমের খিচুড়ি চাপিয়ে জ্বাল দিতে শুরু করেছিস। গামলায় কখন তেল রাখতে হবে আর কখন এ্যাসিড, তা তোরা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই বুঝিস। তোরা অপচুনিস্ট, তোরা ক্যারিয়ারিস্ট, তোরাই সোস্যাল ক্লাইম্বার। তোরা হোয়াট নট। দাড়ি কামানোর রেজর থেকে শুরু ক’রে ফুলদানি হরলিক্স- এর বোতল গেঞ্জি গামছা ন্যাকড়া-চোকড়া মায় জুতো পর্যন্ত রাখা যায় তোদের শেলফে।’

মওলা ক্ষুণ্ণ হ’য়ে বললে, ‘এমনভাবে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছিস যেন নেতৃত্ব দিতে চাস।’

‘চোখ রাঙানোর কি আছে এতে? বাজে ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা করিস তুই, সেধে ধোলাই খাস!’

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024