শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৩১)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


দারাকের রিপোর্ট

বঙ্গদেশে নীল শিল্পের অবস্থা এবং অবস্থার আলোকে অন্যখানে নীল শিল্পের প্রতিষ্ঠাই দারাকের রিপোর্টের প্রতিপাদ্য বিষয়। এই কারণে দারাকের রিপোর্টে আছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নীল শিল্পের খুঁটিনাটি সব বিষয়ের বর্ণনা। সে সময়ের নীল শিল্প সম্পর্কে এ ধরনের বর্ণনা আর কোথাও নেই।” তার রিপোর্টের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলেও এ কথা তো আমরা জানি যে সরেজমিনে তদন্ত, নিজের চোখে খুঁটিনাটি জিনিস সবিস্তারে দেখার জন্য তিনি পরিদর্শন করেছিলেন তিরিশটি নীলকুঠি। “বঙ্গদেশে অবস্থানকালে নিজের চোখে আমি যা দেখেছি এবং নীলকররা এ সম্পর্কে যে তথ্য আমাকে দিয়েছেন তাই আছে এই রিপোর্টে।

পাঠকদের প্রথমে তিনি নিয়ে গেছেন নীল গাছের আবাদে। তারপর তিনি বলেছেন নীল গাছের জন্য উপযুক্ত জমি কোনটি, কি করে চাষের জন্য জমি তৈরি করা হয়, নীল বীজ কয় প্রকার এবং কি করে তা বপন করতে হয়। তারপর জমি থেকে আগাছা সাফ করার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। সব শেষে তিনি বলেছেন চাষাবাদের পদ্ধতি সম্পর্কে এবং কি করে ফসল নীলকুঠিতে নেয়া হয় সে সম্পর্কে। এরপর তিনি নীল গাছ থেকে রঞ্জকে আহরণের জটিল প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন। এরপর তিনি ব্যাখ্যা করেছেন উৎপাদনের প্রধান ধাপগুলি (জলে ডোবানো, গাছে বারবার আঘাত করা, পানিতে সেদ্ধ করা, পরিশ্রুতকরণ, চাষ দেয়া, কাটা, শুকানো ও প্যাক করা)। সব শেষে তিনি বলেছেন কি করে সঠিকভাবে চৌবাচ্চা তৈরি করতে হয়, জলাধার তৈরি করতে হয়। তারপর তিনি বলেছেন পাম্প, শুকাবার ঘর ও ভাল নীল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের চুল্লীর কক্ষ।

শুধু উৎপাদনের বর্ণনা ছাড়াও এ রিপোর্টে আরও অনেক কিছু আছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কিভাবে নীল উৎপাদন আরও উন্নততর করা যায় সে সম্পর্কে অনেক উপদেশ আছে। দারাক তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের নীল উৎপাদনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অবলম্বনে সদা সর্বদাই অবস্থার উন্নতি ঘটানো হচ্ছে এমনটা নয় তবুও প্রতি বছর হাজার হাজার নীলকর আশাপ্রদ ফল পাচ্ছে। এ ধরনের সফলতায় আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা আমরা যদি পঁচিশ বছর সময়কালের কথা বিবেচনা করি তা হলে এই সময়ে উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিয়েছে বহুবিধ আর সেগুলো সমাধানও করা হয়েছে। বাংলাদেশের নীলকররা বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে তা সমাধানের জন্য হাতেনাতে যে সমাধানের ব্যবস্থা করেছেন তা হয়েছে ফলপ্রসূ। এই পদ্ধতির জন্যই সাফল্য। নীলকররা নিজেরাই তার বিশেষ সমস্যা মোকাবেলার জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কাজ হয়েছে তাতেই।

এতসব কিছু সত্ত্বেও দারাকের মতে পদ্ধতিগত উন্নতির আরও সুযোগ আছে। কয়েকটি ব্যাপারে তিনি কঠোর সমালোচক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাংলাদেশে যেভাবে নীল জাল দেয়ার চুল্লী বানানো হয় তা তরল পদার্থ গরম করার কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না এবং এর ফলে নীল প্রস্তুতের খরচ বেড়ে যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024