০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • 19

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘বা রে, বেমালুম ভুলে ব’সে আছেন সব?’

‘আপনি কি সত্যিই সিরিয়াসলি নিয়েছেন ব্যাপারটাকে?’

‘বেশ লোক তো আপনি!’

‘অযথা সময় নষ্ট হবে আপনার, ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।’

‘আমার কাজই হ’লো সময় নষ্ট করা। রুটিন ধ’রে সময় নষ্ট করতে হয় আমাকে–‘ লুলু চৌধুরী বললে, ‘আপনাকে ব্যাপারটা খুলে বলি, বাঘা বাঘা কর্তাব্যক্তিদের কয়েকজনকে নিয়ে আমরা একটা গ্রুপ কোম্পানির পেট চিরে বেরিয়ে আসছি খুব শিগগির, উদ্দেশ্য নতুন কোম্পানি খাড়া করা, হয়তো কিছু কিছু শুনেও থাকবেন–‘

খোকা বললে, ‘আমি কিছু শুনিনি, এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই!”

‘কেন, বাইরে তো যথেষ্ট কাগজপত্র ছেড়েছি আমরা। বুঝলেন না, এই হচ্ছে প্রকৃত সময়। সব টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হোক এখন আর বাঙালিদের কেউ তা চায় না। হেড অফিসগুলো সব পশ্চিমে। দেখতেই তো পাচ্ছেন, দেশের লোক কিভাবে ক্ষেপে উঠেছে, সকলেই চাচ্ছে দেশের টাকা দেশেই থাকুক, দেশেই খাটুক–‘

বাধা দিয়ে খোকা বললে, ‘সকলেই চাচ্ছে, না আপনারা তাদের

জ্ঞানদান করছেন?’

লুলু চৌধুরী হেসে বললে, ‘দেশের লোকই চাচ্ছে–

থোকা আবার বাধা দিলো। বললে, ‘দেশের লোক যে কি চায় তারা নিজেরাই তা জানে না; হাত তুলতে বললে সবাই হাত তোলে, ঐ পর্যন্তই।’

লুলু চৌধুরী অসহিষ্ণু হ’য়ে বললে, ‘আপনি ঠিক ধরতে পারেননি ব্যাপারটা। দেশে রাজনৈতিক দল রয়ে গেছে, মান্যিগন্যি নেতারা আছেন, তাঁরা তাঁদের নিজেদের কিংবা দলের স্বার্থের কথা বিবেচনা ক’রে দেশের লোককে যেদিকে ঠেলে দেবেন, তারা সেইদিকেই যাবে, কিছুই করার নেই আপনার-আমার। আমাদের কাজ হবে শুধু পাবলিক সেন্টিমেন্টটাকে মূলধন ক’রে সময়মতো তা কাজে লাগানো, আমাদের ভূমিকা তো এই-ই!’

‘এক মিনিট, চা না কোল্ড ড্রিংক?’

‘না, চা নয়–‘

উঠে ফ্রিজ থেকে কোকাকোলা বের করলে সে, তারপর গ্লাসে ঢেলে লুলু চৌধুরীর সামনে দিলো।

খোকা বললে, ‘তার মানে দেশের লোককে চুষে ছিবড়ে ক’রে ফেলে দেওয়াটাই সব প্রোগ্রামের মূল কথা–‘

‘যেমন?’

‘শুধু বীমা কোম্পানির কথা ভাবছেন কেন, সকলেই যে যার স্বার্থে আদাজল খেয়ে ঐ সেন্টিমেন্টকেই কাজে লাগাবার চেষ্টা করবে, ফলটা কি দাঁড়াবে শেষ পর্যন্ত?’

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮৫)

১২:০০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘বা রে, বেমালুম ভুলে ব’সে আছেন সব?’

‘আপনি কি সত্যিই সিরিয়াসলি নিয়েছেন ব্যাপারটাকে?’

‘বেশ লোক তো আপনি!’

‘অযথা সময় নষ্ট হবে আপনার, ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।’

‘আমার কাজই হ’লো সময় নষ্ট করা। রুটিন ধ’রে সময় নষ্ট করতে হয় আমাকে–‘ লুলু চৌধুরী বললে, ‘আপনাকে ব্যাপারটা খুলে বলি, বাঘা বাঘা কর্তাব্যক্তিদের কয়েকজনকে নিয়ে আমরা একটা গ্রুপ কোম্পানির পেট চিরে বেরিয়ে আসছি খুব শিগগির, উদ্দেশ্য নতুন কোম্পানি খাড়া করা, হয়তো কিছু কিছু শুনেও থাকবেন–‘

খোকা বললে, ‘আমি কিছু শুনিনি, এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই!”

‘কেন, বাইরে তো যথেষ্ট কাগজপত্র ছেড়েছি আমরা। বুঝলেন না, এই হচ্ছে প্রকৃত সময়। সব টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হোক এখন আর বাঙালিদের কেউ তা চায় না। হেড অফিসগুলো সব পশ্চিমে। দেখতেই তো পাচ্ছেন, দেশের লোক কিভাবে ক্ষেপে উঠেছে, সকলেই চাচ্ছে দেশের টাকা দেশেই থাকুক, দেশেই খাটুক–‘

বাধা দিয়ে খোকা বললে, ‘সকলেই চাচ্ছে, না আপনারা তাদের

জ্ঞানদান করছেন?’

লুলু চৌধুরী হেসে বললে, ‘দেশের লোকই চাচ্ছে–

থোকা আবার বাধা দিলো। বললে, ‘দেশের লোক যে কি চায় তারা নিজেরাই তা জানে না; হাত তুলতে বললে সবাই হাত তোলে, ঐ পর্যন্তই।’

লুলু চৌধুরী অসহিষ্ণু হ’য়ে বললে, ‘আপনি ঠিক ধরতে পারেননি ব্যাপারটা। দেশে রাজনৈতিক দল রয়ে গেছে, মান্যিগন্যি নেতারা আছেন, তাঁরা তাঁদের নিজেদের কিংবা দলের স্বার্থের কথা বিবেচনা ক’রে দেশের লোককে যেদিকে ঠেলে দেবেন, তারা সেইদিকেই যাবে, কিছুই করার নেই আপনার-আমার। আমাদের কাজ হবে শুধু পাবলিক সেন্টিমেন্টটাকে মূলধন ক’রে সময়মতো তা কাজে লাগানো, আমাদের ভূমিকা তো এই-ই!’

‘এক মিনিট, চা না কোল্ড ড্রিংক?’

‘না, চা নয়–‘

উঠে ফ্রিজ থেকে কোকাকোলা বের করলে সে, তারপর গ্লাসে ঢেলে লুলু চৌধুরীর সামনে দিলো।

খোকা বললে, ‘তার মানে দেশের লোককে চুষে ছিবড়ে ক’রে ফেলে দেওয়াটাই সব প্রোগ্রামের মূল কথা–‘

‘যেমন?’

‘শুধু বীমা কোম্পানির কথা ভাবছেন কেন, সকলেই যে যার স্বার্থে আদাজল খেয়ে ঐ সেন্টিমেন্টকেই কাজে লাগাবার চেষ্টা করবে, ফলটা কি দাঁড়াবে শেষ পর্যন্ত?’