০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • 19

পিওতর মান্তেইফেল

পরবাসীর পঞ্জিকা

দিব্যি সুন্দর শুকনো আবহাওয়া। চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর, ছায়াচ্ছন্ন সবুজ তরুবীথি তলেও গরম। কিন্তু ভারত থেকে আনা মস্কো চিড়িয়াখানার বিশাল পাইথনটা ভাব করছে এমন যেন এখন শীতকাল। নড়াচড়া তার অনেক কমে গেল, সাপটার কাছে রাখা শুয়োর-ছানাটা পর্যন্ত সে ছ’লে না। আগের মতোই সে পাথরের একটা খোঁচার তলে নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল: এই সময় তার স্বদেশ ভারতে যে ঠান্ডা বৃষ্টি পড়ে, তা থেকে যেন আত্মরক্ষা করছিল সে।

আর শীতে, ধূসর তুষার-মেঘ যখন নেমে আসে নিচে, ফুলো ফুলো খইয়ের মতো পড়ে তুষার, তখন চিড়িয়াখানায় বাচ্চা দিতে শুরু করে অস্ট্রেলীয় উটপাখি এমু। গোটা চিড়িয়াখানাটা তুষারস্তূপে ঢাকা হলে কী হবে, এ সময় অস্ট্রেলিয়ায় যে পুরো বসন্ত!

অক্টোবর-নভেম্বরে বাচ্চা দিতে লাগল অন্য অস্ট্রেলীয় পাখি কালো রাজহাঁস। তখন চিড়িয়াখানায় কোনো দর্শক এলে দেখতে পাবেন জল-গুল্ম দিয়ে খাটিয়ে বানানো বাসায় তুষারের পাউডার মেখে বসে আছে কৃষ্ণা- সুন্দরী। বাসায় তার পাঁচটি ডিম। পালা করে তাতে তা দিচ্ছে মন্দা আর মাদী।

অন্য অক্ষাংশ থেকে আনা কিছু কিছু জীবজন্তুর ক্ষেত্রে শীতকালে বাচ্চা দেবার মতো এই বিচিত্র ব্যাপারটা বংশগতভাবে চলে আসে, ওটা তাদের মজ্জাগত। আর চিড়িয়াখানার পরদেশী পোষ্যরা যখন আসার কয়েক বছর পরেও দিন কাটাতে থাকে তাদের স্বদেশের ‘পঞ্জিকা’ মেনে, তখন আমরা বলি: ওদের জৈবিক ছন্দ কাজ করছে, অর্থাৎ তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে প্রাণধারণের যে পরিস্থিতি, তার প্রভাবে

যুগের পর যুগ ধরে নির্দিষ্ট প্রাণীগুলির মধ্যে যে জৈবিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে, তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এক-একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের পর।

মস্কো চিড়িয়াখানায় কৃষ্ণ মরালের এই বিদঘুটে আচরণের কারণ কী? স্বদেশে এসব পাখির প্রাণধারণের পক্ষে উপযোগী যেসব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আগেই স্বাভাবিক নির্বাচনে গড়ে ওঠে ও সংহত হয়, এটা তার বংশগত কালচক্র। তবে এ কথা ভাবার কারণ নেই যে তার কিছুই বদলায় না। একবার, ১৯৩৬ সালে আমরা কৃষ্ণ মরালদের নিয়ে তেমন একটা পরীক্ষা করি। একেবারে বসন্ত না আসা পর্যন্ত আমরা তাদের বাসা বানাতে দিই নি, কেবলি তা ভেঙে দিতাম। বসন্তে ওদের আর জ্বালাই নি, তখন ডিম দেয় তারা।

পরে কালো রাজহাঁসের ছানারা যখন বড়ো হয়ে ওঠে, তখন তারা বাচ্চা দিতে শুরু করে বসন্তের কাছাকাছি।

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-০৮)

০৮:০০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

পিওতর মান্তেইফেল

পরবাসীর পঞ্জিকা

দিব্যি সুন্দর শুকনো আবহাওয়া। চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর, ছায়াচ্ছন্ন সবুজ তরুবীথি তলেও গরম। কিন্তু ভারত থেকে আনা মস্কো চিড়িয়াখানার বিশাল পাইথনটা ভাব করছে এমন যেন এখন শীতকাল। নড়াচড়া তার অনেক কমে গেল, সাপটার কাছে রাখা শুয়োর-ছানাটা পর্যন্ত সে ছ’লে না। আগের মতোই সে পাথরের একটা খোঁচার তলে নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল: এই সময় তার স্বদেশ ভারতে যে ঠান্ডা বৃষ্টি পড়ে, তা থেকে যেন আত্মরক্ষা করছিল সে।

আর শীতে, ধূসর তুষার-মেঘ যখন নেমে আসে নিচে, ফুলো ফুলো খইয়ের মতো পড়ে তুষার, তখন চিড়িয়াখানায় বাচ্চা দিতে শুরু করে অস্ট্রেলীয় উটপাখি এমু। গোটা চিড়িয়াখানাটা তুষারস্তূপে ঢাকা হলে কী হবে, এ সময় অস্ট্রেলিয়ায় যে পুরো বসন্ত!

অক্টোবর-নভেম্বরে বাচ্চা দিতে লাগল অন্য অস্ট্রেলীয় পাখি কালো রাজহাঁস। তখন চিড়িয়াখানায় কোনো দর্শক এলে দেখতে পাবেন জল-গুল্ম দিয়ে খাটিয়ে বানানো বাসায় তুষারের পাউডার মেখে বসে আছে কৃষ্ণা- সুন্দরী। বাসায় তার পাঁচটি ডিম। পালা করে তাতে তা দিচ্ছে মন্দা আর মাদী।

অন্য অক্ষাংশ থেকে আনা কিছু কিছু জীবজন্তুর ক্ষেত্রে শীতকালে বাচ্চা দেবার মতো এই বিচিত্র ব্যাপারটা বংশগতভাবে চলে আসে, ওটা তাদের মজ্জাগত। আর চিড়িয়াখানার পরদেশী পোষ্যরা যখন আসার কয়েক বছর পরেও দিন কাটাতে থাকে তাদের স্বদেশের ‘পঞ্জিকা’ মেনে, তখন আমরা বলি: ওদের জৈবিক ছন্দ কাজ করছে, অর্থাৎ তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে প্রাণধারণের যে পরিস্থিতি, তার প্রভাবে

যুগের পর যুগ ধরে নির্দিষ্ট প্রাণীগুলির মধ্যে যে জৈবিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে, তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এক-একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের পর।

মস্কো চিড়িয়াখানায় কৃষ্ণ মরালের এই বিদঘুটে আচরণের কারণ কী? স্বদেশে এসব পাখির প্রাণধারণের পক্ষে উপযোগী যেসব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আগেই স্বাভাবিক নির্বাচনে গড়ে ওঠে ও সংহত হয়, এটা তার বংশগত কালচক্র। তবে এ কথা ভাবার কারণ নেই যে তার কিছুই বদলায় না। একবার, ১৯৩৬ সালে আমরা কৃষ্ণ মরালদের নিয়ে তেমন একটা পরীক্ষা করি। একেবারে বসন্ত না আসা পর্যন্ত আমরা তাদের বাসা বানাতে দিই নি, কেবলি তা ভেঙে দিতাম। বসন্তে ওদের আর জ্বালাই নি, তখন ডিম দেয় তারা।

পরে কালো রাজহাঁসের ছানারা যখন বড়ো হয়ে ওঠে, তখন তারা বাচ্চা দিতে শুরু করে বসন্তের কাছাকাছি।