সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৩১)

  • Update Time : সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.১৪ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

সুন্দরবনের উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত নদী গুলির অবনতি অপেক্ষাকৃত কম হলেও সব চাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে পূর্ব-পশ্চিম বাহিনী নদীগুলির ক্ষেত্রে। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রবাহিত নদীগুলির ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করলাম সুন্দরবনের পূর্বাংশে প্রবাহিত নদীগুলি রায়মঙ্গল, কালিন্দী প্রভৃতি নদী অপেক্ষাকৃত সজীব রয়েছে কিন্তু পশ্চিমের নদীগুলি পিয়ালী বিদ্যাধরী বোয়ালিয়া মাতলা প্রভৃতি তাদের গর্ভে প্রতিনিয়ত পলি জমছে এবং অনেকস্থলে নদী গর্ভ – ভূপৃষ্ট থেকে উচু হয়ে গিয়েছে অনেক নদীতে জোয়ার ভাটা খেললেও মুমূর্ষু রোগীর নিশ্বাস প্রশ্বাস নেবার মত দুর্বল। খুলনা জেলার দক্ষিণের নদীগুলি সমুদ্রগামী জাহাজের পক্ষে নাব্য থাকলেও বঙ্গোপসাগরে নিমজ্জিত পলিরমঞ্চ এই নদীগুলিকে কত দিন সক্রিয় রাখবে তা আগামী দিনে জানা যাবে।

ব্রিটিশ রাজত্বের শেষের দিকে বিশেষ করে সমগ্র বিংশ শতাব্দী জুড়ে নৌপথকে অবহেলা করা হল। নৌপরিবহণ সব চাইতে সস্তা পরিবহণ হিসাবে স্বীকৃত। নৌপথকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না তোলার ফলে এই এলাকার অগ্রগতি ঘটতে পারেনি। সুন্দরবনের এমন অনেক এলাকা ছিল যেখানকার মাল শহরে আনতে গেলে যে সময় লাগত তার মধ্যে অনেক জিনিস অব্যবহার্য হয়ে যেত।

যার ফলে ঐ সব এলাকার মানুষ মাছ, দুধ ও অন্যান্য খাদ্যদ্রবের জন্য উপযুক্ত মূল্য পেত না যে কোন এলাকার আর্থিক উন্নতির অপরিহার্য শর্ত উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা- তা ব্রিটিশ রাজত্বের শেষে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে তার অভাব অনুভব করা গিয়েছিল।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যন্ত্রশিল্পের প্রভূত উন্নতি করা সত্বেও তারা বেশি বেশি জলপথ পরিবহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ৩২ আর সুন্দরবনের স্বাভাবিক নদীপ্রবাহকে উপযুক্ত ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হল না। আজকের দিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির মধ্য দিয়ে অগভীর জলে বহু পরিমাণ মাল চলাচলের উপযোগী জলযান তৈরি করা সম্ভব। এরোপ্লেনের প্রপেলারের মতো প্রপেলার লাগিয়ে অল্পজলে বায়ুর চেয়ে দ্রুতগামী জলযান চালান সম্ভব। রেলপথ বা সড়কপথ-এর থেকে কম খরচে জলপথ পরিবহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল তা ব্রিটিশ রাজত্বে অবহেলা করা হল।

অনেকে নদীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেবার কথা বলেন-নদীর ওপর কোন রকম নিয়ন্ত্রণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়- নিঃসন্দেহে এটা হতাশার কথা। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে নদীবিজ্ঞানকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নদীশাসন অবশ্যই করতে হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024