আর্কাদি গাইদার
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
এরপর চুপ করে গেল ফেকা। এ-ব্যাপারেও ফেকা আমার চেয়ে বেশি জানে দেখে আবারও আমার রাগ ধরে গেল। আমাকেও জানতে হবে ব্যাপারটা, কিন্তু এমন কেউ নেই যার কাছ থেকে জানা যায়। মুশকিল এই যে এর বিন্দুবিসর্গও কোনো বইতে নেই। কেউ কখনও এ-বিষয়ে আমায় কিছু বলেও নি।
বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়ার পর মা যখন বিশ্রাম নিতে শুয়েছেন তখন গুটিগুটি বিছানায় উঠে মা-র পাশে বসলুম। বললুম:
‘মা-মণি, আমায় উনিশ শো পাঁচ সম্বন্ধে কিছু বল না গো। অন্য ছেলেদের বাবা-মারা তো তাদের এ-সম্বন্ধে কত গল্প বলে। ফেদুকা কত মজার মজার গপ্পো জানে। আমি কিছুই জানতে পারি না, আমায় তোমরা কিছুই বল না।’
কথাটা শুনে ভুরু কুচকে মা হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। মনে হল, বুঝি আমায় বকতে যাচ্ছেন। তারপর আরও কী মনে ‘করে এমন অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন জীবনে এই প্রথম তিনি আমায় দেখছেন।
‘উনিশ শো পাঁচ? কী বলছিস তুই?’
‘কী বলছি তা তো ভালোই জান। তুমি তো কত বড়, কত গায়ে জোর তোমার। ওই সময়ে তুমি নিশ্চয় অনেক বড় হয়ে গিয়েছিলে। আমি তো তখন এক বছরের বাচ্চা। আমার যে কিছু মনে নেই।’
‘আমি কী বলব বল? বরং তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর। উনি খুব ভালো গল্প বলতে পারেন। উনিশ শো পাঁচ সালে আমার যা জঘন্য দিন গেছে তোকে নিয়ে। এই ছোট্ট বাঁদরটার জন্যে কম ভুগি নি। তুই যা ছিলি না তখন, ভাবলে ভয় হয়। দিনরাত খালি চিল-চ্যাঁচাতিস। এক দণ্ড শান্তি ছিল না আমার। সারা রাত ধরে চ্যাঁচাতিস আর আমায় জালাতিস, তখন আমি কে, কোথায়-বা আছি, এসব কিছু হাশ ছিল না কি?’
কথাটা শুনে মনে একটু আঘাত পেলুম। বললুম, ‘কেন চ্যাঁচাতুম মা-মণি? বোধহয় ভয় পেয়ে, না? শুনেছি তখন নাকি গুলি চলেছিল আর কসাকরা অত্যাচার করেছিল। আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলুম, নয়?’
Sarakhon Report 






















