সারাক্ষণ ডেস্ক

লরা মারলিংয়ের সঙ্গীতে লোকগীতি রয়েছে তার রক্তে। ইংরেজ এই গায়িকার মা সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন এবং তার বাবা, একজন গিটারিস্ট, একটি রেকর্ডিং স্টুডিও চালাতেন এবং তার জীবনের প্রথম কয়েক বছরে তাকে গিটার শেখান। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, অনেক তরুণ শিল্পীর মতো, তিনি মাইস্পেসে কয়েকটি গান আপলোড করেন এবং ২০০৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম অ্যালবাম “অলাস, আই ক্যাননট সুইম” প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তিনি এতটাই সৃষ্টিশীল ছিলেন যে তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রতিটি ধাপ সঙ্গীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার প্রথম সাতটি অ্যালবামের চারটিই যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডের সেরা অ্যালবামের জন্য বার্ষিকভাবে প্রদান করা মেরকিউরি প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

তার প্রথম অ্যালবামে, লরা মারলিংয়ের সঙ্গীত প্রায় পপ ধাঁচের ছিল—তার কিশোরী কণ্ঠ একটি উচ্চ স্বরে থেকে গিয়েছিল এবং তার লোকগীতি-প্রভাবিত সুরগুলো ছিল সহজ-সাবলীল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার সঙ্গীত আরো গভীর ও ভারী হয়ে ওঠে। তার সঙ্গীতে মজা থাকলেও তা প্রাচীন শিকড়ের ইঙ্গিত দিত। তিনি স্নাতক পর্যায়ে মনোবিশ্লেষণ অধ্যয়ন করেন এবং এটিকে তার সৃষ্টিতে প্রয়োগ করেন। তিনি এটিকে একটি “অবিশ্বাস্যভাবে ফলপ্রসূ সৃজনশীল উপকরণ” বলে অভিহিত করেছেন, যা অবচেতন মানসিকতার কবিতামূলক প্রকৃতিকে তদন্ত করার উপর ভিত্তি করে। তার ২০২০ সালের প্রকাশনা “সং ফর আওয়ার ডটার” শিরোনামটি ভবিষ্যৎবাণীমূলক ছিল—তিনি তখনও মা হননি এবং ২০২৩ সালে তার একটি মেয়ের জন্ম হয়।

লরা মারলিংয়ের নতুন অ্যালবাম, “প্যাটার্নস ইন রিপিট” (ক্রিসালিস/পার্টিসান), শুক্রবার প্রকাশিত হবে, এবং এটি জীবনের ছন্দ নিয়ে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ তুলে ধরে।

প্রথম গান “চাইল্ড অফ মাইন” একটি নতুন মায়ের গান, যিনি তার শিশুকে নিয়ে বিস্ময়ে হারিয়ে যান, এবং এই ভয়ে থাকেন যে তিনি তার শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারবেন না। “তোমার চাওয়া সবকিছু এখন তোমার হাতের নাগালে, এবং যেটা নয়, সেটা আমি তোমাকে শেখাতে পারবো,” লরা মারলিং সুকৌশলে গিটার এবং দূরবর্তী কণ্ঠের সাথে গেয়ে ওঠেন। এই অ্যালবামে তিনি ডম মনকসের সাথে সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন, এবং গানের মধ্যে থাকা সূক্ষ্ম স্ট্রিং এবং মাঝেমধ্যে পিয়ানো সঙ্গীতের সাদামাটা স্বরূপকে আরও ব্যক্তিগত ও ঘরোয়া করে তুলেছে।

“প্যাটার্নস ইন রিপিট” মা হওয়ার এক ধরনের ধারণাগত রেকর্ড হলেও এটি সহজেই উপভোগ করা যায় এমন কারো দ্বারা, যারা বৃদ্ধি, স্মৃতি এবং প্রকৃতির পূর্বনির্ধারিততার সাথে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার টানাপোড়েন নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে।

লরা মারলিংয়ের গায়কী শৈলী কিছুটা শীতলতা এবং দূরত্ব প্রকাশ করে, যা তার পর্যবেক্ষণগুলোকে একটি সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে, নির্দিষ্ট পরিচয়ের সাথে আটকে না রেখে। এবং অ্যালবামটি যখন মা ও শিশুর দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়, তখন এটি ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হয়ে ওঠে, যেখানে প্রেম, অনুশোচনা এবং বার্ধক্যের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

দ্বিতীয় গান “প্যাটার্নস”-এ দ্রুত গিটার বীট শিরোনামের চিত্রটিকে শক্তিশালী করে তোলে, এবং এটি প্রমাণ করে যে আমরা সবাই এমন একটি প্রক্রিয়ার অংশ, যা যুগে যুগে প্রকাশিত হয়।

গানটি উষ্ণ এবং মৃদু, এবং লরা মারলিং এই দীর্ঘ দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বস্তি খুঁজে পান। কিন্তু মহাজাগতিক নিয়তি এবং মুক্ত ইচ্ছার মধ্যে ভারসাম্য সবসময় থাকে। “নো ওয়ানস গনা লাভ ইউ লাইক আই ক্যান” একটি সুন্দর পিয়ানো সুর নিয়ে আসে, যা স্মৃতি থেকে প্রতিধ্বনিত হয়, এবং এটি একটি সরল সত্যের প্রকাশ: যদিও আমরা নিজেদের গভীর আবেগে আটকে থাকি, তবুও আমরা আমাদের নিজস্ব পথে কাজ করে যাই।

লরা মারলিং অসাধারণ একজন লেখক—তিনি এমন লাইন লিখেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে সত্য মনে হয়, যেন আপনি আগে শুনেছেন কিন্তু সেগুলো ঠিক কোথায় শুনেছেন তা মনে করতে পারেন না। অতীতে, তার শব্দগুলো প্রায়শই কবিতা অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রভাবিত ছিল। এখানে, তিনি স্বচ্ছতা এবং সরলতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, এবং যখনই প্রয়োজন, একটি প্রত্যাশিত ছন্দ ব্যবহার করে মূল ভাবনা প্রকাশ করেছেন।

অ্যালবামটির প্রতিটি চরিত্র সময়ের সাথে সাথে বয়স্ক হয়। “ক্যারোলাইন” গানটি একটি মানুষের ক্লান্তি এবং লিওনার্ড কোহেনের রসবোধের ছোঁয়া দিয়ে রচিত হয়েছে, যেখানে একজন পুরুষ একটি অল্প সময়ের সম্পর্ককে স্মরণ করছে, যা তার মন থেকে কখনও মুছে যায়নি, এবং সেই সময়ের একটি সুর স্মরণ করতে চেষ্টা করছে—“একটি গান যা আমি কেবল মনে করতে পারি / যায়, ওহ, কিছু একটা, কিছু একটা, ক্যারোলাইন।”

গানের সুরগুলো অ্যালবামের ভাবনাগুলোকে সমর্থন করে। “ইন্টারলুড (টাইম প্যাসেজেস)” একটি মিনিমালিস্ট ছোট্ট সুর, যেখানে স্টিভ রাইকের ইঙ্গিত রয়েছে, যেখানে পুনরাবৃত্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রাচীন ও দৃঢ়ভাবে নির্ধারিত নির্দেশনাগুলোর অধীনে বস্তু গড়ে ওঠে, যা নগ্ন চোখে দেখা যায় না।

শিরোনাম গানটি স্বাধীনতা, আপস এবং শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একটি ধ্যানমূলক রচনা। তিনি জীবনের কথা গেয়েছেন, যেমন একটি মা হিসেবে সবকিছু যা নতুন দায়িত্ব নিয়ে আসে, এবং শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেছেন যে এটি মূল্যবান: “আমি চাই তুমি জানো যে আমি স্বেচ্ছায় এটি ছেড়ে দিয়েছি / কিছুই হারায়নি তোমাকে আমার কাছে আনার পথে।”

ধুমাত্র এর গানের দিক থেকে বিবেচনা করলে, “প্যাটার্নস ইন রিপিট” অত্যাশ্চর্য, কারণ লরা মারলিং সময়ের মধ্য দিয়ে চলে যান, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন, এবং সঠিক পরিমাণে জ্ঞান ও হাস্যরস মিশিয়ে দেন। যদিও সঙ্গীতায়োজনগুলো দক্ষ ও প্রকাশশীল, এটি মূলত একটি গানের রেকর্ড, এবং প্রথমবার শুনতে কিছুটা সাদামাটা মনে হতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, এটি লরা মারলিংয়ের সেরা অ্যালবামগুলোর একটি, যার অর্থ এটি বছরের সেরা গায়ক-গীতিকারদের অ্যালবামগুলোর একটি।