শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমার কার্যাচ্যুত হইয়া এক্ষণে নীরবে কাল কাটাইতে লাগিলেন। সে সময়ে তিনি প্রায় কলিকাতায় বাস করিতেন। কলিকাতার যেস্থানে বাঁডন উদ্যান রহিয়াছে, তথায় নন্দকুমারের আবাসবাটী ছিল। ইহার নিকট আজিও একটি স্ট্রীট তাঁহার পুত্র রাজা গুরুদাসের নাম ঘোষণা করিতেছে। ক্লাইব ভারতবর্ষে আসিয়া ভান্সিটার্ট-রাও-ত্বের অনেক প্রকার নিন্দাবাদ শ্রবণ করেন এবং তাহার তথ্যানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হন।
কিন্তু কাহারও উপর সে ভার দিয়া নিশ্চিন্ত হইতে পারেন নাই। অবশেষে তাঁহাকে নন্দকুমারের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। সেই সময়ে তিনি অনুসন্ধানের দ্বারা বুঝিতে পারিলেন যে, ভান্সিটার্ট নন্দকুমা- রের বিরুদ্ধে অনেক কথা বিদ্বেষবশতঃই লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। তিনি নন্দকুমারকে আবার স্নেহচক্ষে দেখিতে লাগিলেন এবং তাঁহাকে ভান্সিটার্টরাজত্বের একটি আমূল বিবরণ লিখিতে বলেন। নন্দকুমার তাহার এক বৃহৎ তালিকা প্রস্তুত করিয়া দেন।
ক্লাইব সেই তালিকা লইয়া বিলাতে রওনা হন। ক্লাইব বিলাতে চলিয়া গেলে, ভেলেষ্ট সাহেব তাঁহার স্থানে কলি- কাতার গবর্ণর হইয়া আসেন। ভেলেষ্টের সহিত নন্দকুমারের বিশেষ রূপ পরিচয় হয়। কিন্তু বিপক্ষেরা ক্রমশ নন্দকুমারের প্রতি তাঁহারও বিরক্তি জন্মাইতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। সেই সময়ে কলিকাতায় আর একজন তাঁহার বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠেন, তিনি রাজা নবকৃষ্ণ। রাজা নবকৃষ্ণ চিরদিন নন্দকুমারের প্রতিযোগী ছিলেন।
যখন নন্দকুমারের প্রতিভায় দেশ আলোকিত, তিনি দেশের মধ্যে গণয়- মান্য বাঙ্গালী, ও তাঁহার বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজেরাও স্তম্ভিত, সে সময়ে নবকৃষ্ণ মুন্সিগিরি বা বেনীয়ানী করিতেন। নন্দকুমারের শ্রীবৃদ্ধি তাঁহার প্রাণে সহ্য হইল না। তিনি বরাবরই নন্দকুমারকে হিংসার চক্ষে দেখিতেন। যখন ক্লাইব নন্দকুমারকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করিতেন, সে সময়ে নবকৃষ্ণ তাঁহার অধীনতায় সামান্য মুন্সীগিরি কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন।