শ্রী নিখিলনাথ রায়
কমল বলে যে, তাহার পূর্ব্বের মোহর মহারাজের নিকট থাকায়, সে তাঁহার নিকট তাহা চাহিয়াছিল, কিন্তু তিনি ফেরত দেন নাই। তাহার পর মোহনপ্রসাদের নিকট সে শুনিয়াছে যে, মহারাজ তাহার মোহর জাল দলিলে ব্যবহার করিয়াছেন। মহারাজকে সে কথা জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলেন যে, কমলের উপর বিশ্বাস করিয়াই তিনি এই “কার্য্য করিয়াছেন। কমলকে তাঁহার পক্ষ হইয়া তিনি সাক্ষ্য দিতেও বলেন।
কমল তাহাতে উত্তর দেয় যে, লোকে প্রভুর জন্ম জীবন দিতে পারে, কিন্তু ধর্ম নষ্ট করিতে পারে না। কমল এই সকল কথা খাজা পিক্রস ও মুন্সী সদর উদ্দীনের নিকট গল্প করিয়াছিল। কমল উদ্দীনের পর খাজা পিক্রস ও সদর উদ্দীনকে আহ্বান করিয়া তাহা প্রমাণ করা হয়। শীলাবতের স্বাক্ষর প্রমাণ করিবার জন্য সহবৎ পাঠক ও রাজা নবকৃষ্ণকে উপস্থিত করা হয়। সহবৎ পাঠক বলে যে, সে অনেক দিন শীলাবতের সহিত কাৰ্য্য করিয়াছিল এবং তাহার অনেক হস্তাক্ষর দেখিয়াছে; অঙ্গীকার-পত্রে শীলাবতের হস্তাক্ষর বলিয়া তাহার বিবেচনা হইতেছে না।
তাহার পর নবকৃষ্ণ সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হইলেন। তাঁহাকে শীলাবতের হস্তাক্ষর জানার কথা জিজ্ঞাসা করা হইলে, তিনি বলেন যে, আমি তাহার হস্তাক্ষর বিশেষরূপে জানি। অঙ্গীকার-পত্র দেখান হইলে, নবকৃষ্ণ বলিলেন যে, “বুলাকী দাসের উকীল শীলাবৎ” এইটুকু শীলাবতের লেখা বলিয়া বোধ হইতেছে না। ইহা তাহার সাধারণ হস্তাক্ষর নয়; তাঁহার নিকট তাহার অনেক লেখা আছে। অঙ্গীকার-পত্রের স্বাক্ষর শীলাবতের নয়, ইহা তিনি নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারেন কি না, এ কথা জিজ্ঞাসা করিলে, নবকৃষ্ণ উত্তর দেন যে, শীলাবৎ তাঁহাকে ও লর্ড ক্লাইবকে অনেক পত্র লিখিয়াছিল; তবে ইহা তাহার লেখা কি না, তাহা ঈশ্বর জানেন।
অঙ্গীকার-পত্রের স্বাক্ষরসম্বন্ধে তাঁহার মত কি জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলেন যে, আসামী একজন ব্রাহ্মণ এবং তিনি একজন কায়স্থ, ইহাতে তাঁহার ধর্ম্মের ক্ষতি হইতে পারে। ইহা একটি তুচ্ছ বিষয় নহে, ব্রাহ্মণের জীবন বিপদে পড়িয়াছে। অঙ্গীকার-পত্রের স্বাক্ষর শীলাবতের, হস্তাক্ষর কি না পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলেন যে, সমস্ত সত্য কথা বলিতে তাঁহার মনে যাহা হইতেছে, তাহা তিনি প্রকাশ করিতে পারিতেছেন না। শীলাবং ইহা অপেক্ষা ভাল কি মন্দ লিখিত জিজ্ঞাসা করিলে, নবকৃষ্ণ উত্তর দেন যে, অঙ্গীকার-পত্রের স্বাক্ষর ভাল লেখা, যদিও শীলাবতের লেখা মন্দ নহে, তথাপি এত ভাল ছিল না।