প্রদীপ কুমার মজুমদার
পণ্ডিতেরা অনুমান করেন ব্রাহ্মী লিপি এবং সংখ্যা লিখন পদ্ধতি ভারবর্ষের নিজস্ব সম্পদ। মনে হয় এটিই আমাদের জাতীয় লিপি। আনুমানিক ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। খরোষ্ঠী লিপিতে যেমন লম্বা দাড়ি দিয়ে এক, দুই, তিন, চার সংখ্যাগুলি লেখা হোত।
ব্রাহ্মীলিপিতে কিন্তু সমান্তরাল দাড়ি দিয়ে এগুলি লেখা হোত। শূন্য ও স্থানীয়মান আবিষ্কার করার পূর্বে ও পরে ব্রাহ্মীলিপিতে এক থেকে নয় সংখ্যার লেখার কোন পরিবর্তন হয়নি। ব্রাহ্মীলিপিতে ১, ৪, ৯, ১০, ২০, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০, ৯০, ১০০, প্রভৃতি সংখ্যাগুলিকে প্রকাশ করতে ভিন্ন ভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হোত। কিন্তু প্রাচীন গরোধী, প্রাচীন সুমেরীয়লিপি হাইরোগ্লিফিক এবং ফিনিসীয় সংখ্যা লিখন পদ্ধতিতে ১, ১০, ২০ এবং ১০০ লেখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হোত।
হাইরেটিক ও ডেমটিক লিপিমালাতে সংখ্যা লিখন পদ্ধতিতে ব্রাহ্মীলিপির ১৯টি চিহ্নের সঙ্গে সাদৃশ আছে কিন্তু বাকী চিহ্নগুলির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অনেকে মনে করেন ভারতীয়রা ব্রাহ্মীলিপি মিশরের কাছ থেকে ধার করে এনেছেন অর্থাৎ হাইরেটিক ও ডেমটিক লিপির নিকট ব্রাহ্মীলিপি ঋণী।
ঐতিহাসিকগণ লক্ষ্য করেন যে-মিশরীয়রা প্রথমে এক, দশ, কুড়ি এবং একশ লেখার জন্য মাত্র চারিটি চিহ্ন ব্যবহার করতেন তাহলে হঠাৎ তাঁরা কি করে উনিশটি চিহ্নের ব্যবহার শিখলেন? নিশ্চয়ই অন্য কোথাও তাঁরা এগুলি পেয়েছিলেন। যাই হোক সংখ্যা লিখন পদ্ধতি কে আবিষ্কার করেছেন এবং কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছিল সে বিতর্কে না গিয়ে এটুকু বলা যায় যে বৈদিক যুগে ভারতবর্ষে নিশ্চয়ই সংখ্যা লিখন পদ্ধতি ছিল।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা ( পর্ব-৩৩)