১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন” ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৩২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • 62

শশাঙ্ক মণ্ডল

অনেক উঁচু থেকে নীচে ঝাপ দেয় সন্ন্যাসীরা; ঝাঁপ দেবার আগে সন্ন্যাসীরা গলায় মালা ফুল, সব কিছু তলার ভক্তদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেয় ঐ সব জিনিস সংগ্রহ করে উপস্থিত মানুষেরা পরম ভক্তি ভরে। একমনে দেবতার নাম স্মরণ করে অনেক উপর থেকে নীচে ঝাঁপ দেয় অনেক সময় নীচে জাল ধরে রাখে অনেক মানুষ। জালের ওপর সন্ন্যাসীরা পড়ে। কখনও কাঁটার ওপর ঝাঁপ দেয় একে কাটা ঝাঁপ বলা হয়। এ ভাবে নানা রকম পরীক্ষায় সন্ন্যাসীরা উত্তীর্ণ হয়। চড়ক দণ্ডের মাথায় বাঁশ বেঁধে দু প্রান্তে দু জন সন্ন্যাসী ঝুলে পড়ে এবং নানা রকম শারীরিক কসরত দেখাতে থাকে।

সন্ন্যাস গ্রহণের দিনগুলি সমস্ত সন্ন্যাসী সাংসারিক জীবনের সমস্ত দায়িত্ব থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে রাখে, বাড়িতে থাকে না। সকলে মিলে রান্না করে এবং নিরামিষ আহার গ্রহণ করে। নিজেরাই মাটির পাত্রে আতপ চাল রান্না করে নেয়। ঝাপান অনুষ্ঠানের পরে তারা মাটির কুমির ভাঙে। আগে থেকে একটা মাটির কুমির তারা তৈরি করে রাখে। কুমির মূর্তির সামনে কচ্ছপের মূর্তি আবার হনুমানের মূর্তিও তৈরি করা হয়। চড়কের ঝাপানের শেষে ঐ মাটির কুমির সন্ন্যাসীরা ভেঙে ফেলে শস্য চাষের অনুষ্ঠান করে।

সুন্দরবনের নদীতে অসংখ্য কুমির এবং তার সাথে কচ্ছপের মধ্য দিয়ে হিন্দু পুরাণের অবতারের স্মৃতি এসে যুক্ত হয়। প্রকৃতির শক্তিকে জয় করে মানুষের কৃষি উৎপাদন এগিয়ে চলে। সেজন্য এর আগে শস্যদেবতা শিবের বর মানুষ গ্রহণ করেছে। কুমির পূজা কালু রায়ের পূজা সুন্দরবনের অনেক স্থানে চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক উৎসবের পাশাপাশি মেলা বসে, মেলায় নানা ধরনের জিনিষপত্র নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে দোকানদাররা যোগ দেয়।

চড়ক উৎসব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, সন্ন্যাসীদের নানা রকম শারীরিক কসরত, সাহস, কাঁটা ঝাপ, শাণিত অস্ত্রের ওপর ঝাপ এসবের মধ্যে দিয়ে তা লক্ষ করা যায়, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু চড়ক উৎসব হত যেখানে সাহসী শক্তিমানরা শিবের আশীর্বাদ পাবার জন্য সন্ন্যাসী হত। সুন্দরবনের অনেক দস্যু ডাকাত দলের লোকেরা চড়ক পূজা উপলক্ষে সন্ন্যাসী হত। এদের নানা রকম আকর্ষণীয় ক্রিয়াকলাপ সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করত এবং দেল উৎসবের আকর্ষণ সাংঘাতিক ভাবে বাড়িয়ে তুলত।

গাজন শব্দের মধ্যে ধর্ম প্রচারের জয়োল্লাস বা হুঙ্কার বোঝানো হয়। ঘূর্ণমান চড়ক দণ্ড বৌদ্ধ ধর্মচক্রের ইঙ্গিত দেয়, নিরামিষাশী সন্ন্যাসীদের সাথে বৌদ্ধ শ্রমণদের মধ্যে মিল খুঁজেছেন অনেকে। বৌদ্ধ সহাজিয়া মতের শেষ সাধক যোগীরা চড়ক উৎসবে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে-এসব বিবেচনা করে অনেকে চড়কের মধ্যে প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ উৎসবের স্মৃতি খুঁজে পেয়েছেন।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন”

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৩২)

১২:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

অনেক উঁচু থেকে নীচে ঝাপ দেয় সন্ন্যাসীরা; ঝাঁপ দেবার আগে সন্ন্যাসীরা গলায় মালা ফুল, সব কিছু তলার ভক্তদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেয় ঐ সব জিনিস সংগ্রহ করে উপস্থিত মানুষেরা পরম ভক্তি ভরে। একমনে দেবতার নাম স্মরণ করে অনেক উপর থেকে নীচে ঝাঁপ দেয় অনেক সময় নীচে জাল ধরে রাখে অনেক মানুষ। জালের ওপর সন্ন্যাসীরা পড়ে। কখনও কাঁটার ওপর ঝাঁপ দেয় একে কাটা ঝাঁপ বলা হয়। এ ভাবে নানা রকম পরীক্ষায় সন্ন্যাসীরা উত্তীর্ণ হয়। চড়ক দণ্ডের মাথায় বাঁশ বেঁধে দু প্রান্তে দু জন সন্ন্যাসী ঝুলে পড়ে এবং নানা রকম শারীরিক কসরত দেখাতে থাকে।

সন্ন্যাস গ্রহণের দিনগুলি সমস্ত সন্ন্যাসী সাংসারিক জীবনের সমস্ত দায়িত্ব থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে রাখে, বাড়িতে থাকে না। সকলে মিলে রান্না করে এবং নিরামিষ আহার গ্রহণ করে। নিজেরাই মাটির পাত্রে আতপ চাল রান্না করে নেয়। ঝাপান অনুষ্ঠানের পরে তারা মাটির কুমির ভাঙে। আগে থেকে একটা মাটির কুমির তারা তৈরি করে রাখে। কুমির মূর্তির সামনে কচ্ছপের মূর্তি আবার হনুমানের মূর্তিও তৈরি করা হয়। চড়কের ঝাপানের শেষে ঐ মাটির কুমির সন্ন্যাসীরা ভেঙে ফেলে শস্য চাষের অনুষ্ঠান করে।

সুন্দরবনের নদীতে অসংখ্য কুমির এবং তার সাথে কচ্ছপের মধ্য দিয়ে হিন্দু পুরাণের অবতারের স্মৃতি এসে যুক্ত হয়। প্রকৃতির শক্তিকে জয় করে মানুষের কৃষি উৎপাদন এগিয়ে চলে। সেজন্য এর আগে শস্যদেবতা শিবের বর মানুষ গ্রহণ করেছে। কুমির পূজা কালু রায়ের পূজা সুন্দরবনের অনেক স্থানে চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক উৎসবের পাশাপাশি মেলা বসে, মেলায় নানা ধরনের জিনিষপত্র নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে দোকানদাররা যোগ দেয়।

চড়ক উৎসব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, সন্ন্যাসীদের নানা রকম শারীরিক কসরত, সাহস, কাঁটা ঝাপ, শাণিত অস্ত্রের ওপর ঝাপ এসবের মধ্যে দিয়ে তা লক্ষ করা যায়, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু চড়ক উৎসব হত যেখানে সাহসী শক্তিমানরা শিবের আশীর্বাদ পাবার জন্য সন্ন্যাসী হত। সুন্দরবনের অনেক দস্যু ডাকাত দলের লোকেরা চড়ক পূজা উপলক্ষে সন্ন্যাসী হত। এদের নানা রকম আকর্ষণীয় ক্রিয়াকলাপ সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করত এবং দেল উৎসবের আকর্ষণ সাংঘাতিক ভাবে বাড়িয়ে তুলত।

গাজন শব্দের মধ্যে ধর্ম প্রচারের জয়োল্লাস বা হুঙ্কার বোঝানো হয়। ঘূর্ণমান চড়ক দণ্ড বৌদ্ধ ধর্মচক্রের ইঙ্গিত দেয়, নিরামিষাশী সন্ন্যাসীদের সাথে বৌদ্ধ শ্রমণদের মধ্যে মিল খুঁজেছেন অনেকে। বৌদ্ধ সহাজিয়া মতের শেষ সাধক যোগীরা চড়ক উৎসবে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে-এসব বিবেচনা করে অনেকে চড়কের মধ্যে প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ উৎসবের স্মৃতি খুঁজে পেয়েছেন।