শশাঙ্ক মণ্ডল
অনেক কাহিনী লিখিত সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। অনেক কাহিনী এখনও লোকের মুখে মুখে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। অবশ্য একথা অস্বীকার করে লাভ নেই- এ সব লিখিত কাব্য উন্নত সাহিত্যাদর্শের স্বাক্ষর রাখতে পারেনি। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের সমাজ-অভ্যন্তরে সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রবল ধারা লক্ষ করা গেল।
আদিল পীর
সুন্দরবনের মানুষের কাছে বিশেষত ২৪ পরগণা জেলায় আদিল পীরের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়। অনেকে আদিল পীরকে ঐতিহাসিক ব্যক্তি বলে মনে করেন। বল্লাল সেনের রাজত্ব কালে (১১৫৮-৭৯ খ্রীঃ) তিনি ঢাকা জেলায় রামপালের নিকটে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ২৪ পরগণার বারাসাতের বহেরা গ্রামে আদম পীরের দরগা আছে, তিনি আদম ফকির নামেও পরিচিত।
২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার নিকটে আঁধারমাণিক গ্রামে পীরহজরত শাহ চাঁদের দরগা আছে। অনেকে হজরত শাহকে আদম পীরের বাবা-হিসাবে ধরে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। আদম পীরের ভক্তবৃন্দ বহেরা গ্রামে তাঁর সমাধির ওপর স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করেছেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের বংশধর ধরণী রায় বেশ কিছু জমি পীরোত্তর ভূমি হিসাবে দান করেন। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই পীরের প্রতি ভক্তি জানান এবং এলাকার মানুষের কাছে জাগ্রত পীর হিসাবে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন।
পীর একদিল শাহ
২৪ পরগণার বারাসতের নিকটে আনোয়ার পুরে তিনি ধর্ম প্রচার করেন। রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় এবং রামমোহন রায়ের বংশধররা বেশ কয়েক বিঘা জমি পীরোত্তর ভূমি হিসাবে দান করেন তার দরগায়। এই দরগায় প্রথমেই হিন্দুর শিরণি দেবার অধিকার, বাৎসরিক উরসের সময় আট দশ দিন ধরে এখানে বড় মেলা হয়। কাজীপাড়া ছাড়া এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে একদিল শাহের বিভিন্ন নজরগা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাটার আটি, বাদু, পাটুলী গোবরা জাফরপুর- এই সমস্ত এলাকা বারাসতের নিকটবর্তী, সর্বত্রই হিন্দু মুসলমানের সমান প্রবেশ অধিকার রয়েছে পীর একদিল শাহের দরগা এবং নজরগাগুলিতে।