শশাঙ্ক মণ্ডল
এই পালায় সত্য পীরের সাথে মাণিক পীরের ভাইয়ের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
সত্য নারায়ণ এখানে সত্যপীরে পরিণত হয়ে মুসলমানের আরাধ্য দেবতাও হয়েছে। হিন্দু মুসলমানের মিশ্র সংস্কৃতির পরিচয় লক্ষ করা যাচ্ছে। পীররা দক্ষিণবঙ্গে প্রভাব বিস্তার করার হাতিয়ার হিসাবে কৃষিজীবী সমাজের মানুষগুলিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য তাদের বিভিন্ন মঙ্গল অমঙ্গলের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন।
কৃষিজীবী সমাজে গোধন এক মূল্যবান সম্পদ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই গোধন রক্ষাকারী দেবতা হিসাবে মাণিক পীরের অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়েছে এবং এই দেবতা সমস্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে পাশ কাটিয়ে সমগ্র কৃষিজীবী সমাজের শ্রদ্ধেয় দেবতা এবং পীর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বনবিবি দক্ষিণ রায়
সুন্দরবনের দেবদেবীর আলোচনায় বনবিবি দক্ষিণ রায়কে বাদ দিয়ে হতে পারে না। সুন্দরবনের মানুষের জীবনে এঁদের এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যাতায়াতের পথের ধারে নদীতীরে এমনকী বনের মধ্যে অসংখ্য বনবিবি দক্ষিণ রায়ের থান। অনেকস্থলে প্রতিমা বা প্রতীকও লক্ষ করা যায়। বনবিবি আরণ্যক দেবতা হলেও আকৃতিতে উগ্রতা বা ভয়ঙ্কর রূপ নেই, ভক্তবৎসল দয়াময়ী রূপে তিনি বিরাজিত।
মুসলমান- প্রধান অঞ্চলে দেবী সম্ভ্রান্ত মুসলমান কিশোরী বালিকার মতো চুল বিনুনি করা, পরিধানে ঘাগরা, পাজামা, পায়ে জুতো মোজা, গায়ে ওড়না জড়ানো। দেবীর বাহন বাঘ অথবা মুরগি। কোথাও কোথাও বনবিবির কোলে একটি বালক মূর্তি দেখা যায়। কারোর মতে দক্ষিণ রায়। আবার অন্যরা মনে করেন বালক মূর্তিটি কাঠুরিয়া বালক দুখে। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বনবিবির পূজায় অংশ নেয় শিরনি দেয়, পূজার সাথে কোন ব্রাহ্মাণ জড়িত থাকে না। লোকায়ত ধারণা অনুযায়ী পূজা করা হয়। দু’ এক জায়গায় বনবিবিকে বনদূর্গা হিসাবে ব্রাহ্মণরা পূজা করে থাকে।