আমেরিকার ইতিহাসের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ড— জন এফ কেনেডি, রবার্ট এফ কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যার ঘটনা সংক্রান্ত নথি প্রকাশের পরিকল্পনা সাজাতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “অজস্র মানুষ দীর্ঘ সময়, বহু বছর, এমনকি কয়েক দশক ধরে এই নথিগুলোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
সেইসাথে তিনি আরও বলেন, “সবকিছু প্রকাশ করা হবে।”
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত গোপন নথি প্রকাশের একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশে।
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬৩ সালে টেক্সাসের ডালাসে নিহত হন। তার ভাই রবার্ট এফ কেনেডিকে ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালানোর সময় হত্যা করা হয়।
এদিকে এর ঠিক দুই মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী ও কৃষ্ণাঙ্গদের সম-অধিকার আদায় আন্দোলনের অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিস শহরে হত্যা করা হয়।
এতগুলো বছরে এই তিন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত অনেক নথি প্রকাশ হয়েছে। যদিও সেগুলোকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার।
সেইসাথে, ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত অনেক নথি এখনও গোপন।
জন এফ কেনেডিকে লি হার্ভি অসওয়াল্ড নামের এক মেরিন সেনা সদস্য গুলি করে হত্যা করেছিলেন। তিনি একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে পালিয়ে যান এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। একটি সরকারি কমিশন বলেছিলো, অসওয়াল্ড একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
যদিও এ বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
লি হার্ভি অসওয়াল্ড, যিনি জন এফ কেনেডিকে হত্যা করেছেন
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরকারি সংস্থাগুলোর, মাফিয়া বা অন্য কোনো ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জনই এ বিষয়ে আলোচনা আরও বাড়িয়েছে।
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে বেশিরভাগ আমেরিকানই মনে করেন না যে লি হার্ভি অসওয়াল্ড একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
১৯৯২ সালে কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। ওই আইনে গত ২৫ বছরের মধ্যে তদন্ত-সম্পর্কিত সব নথি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এবং পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জন এফ কেনেডি সম্পর্কিত অনেক নথি প্রকাশ করেছিলেন। তবে কয়েক হাজার নথি এখনও আংশিক বা পুরোপুরি গোপন রাখা হয়েছে।
প্রথম মেয়াদে সব নথি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ট্রাম্প কিছু নথি গোপন রাখেন। কারণ সিআইএ এবং এফবিআই কর্মকর্তারা তাকে সেগুলো প্রকাশ না করার জন্য রাজি করিয়েছিলেন।
তবে এবারের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, “গোপনীয়তার এই ধারাবাহিকতা জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের বিশ্লেষক ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক সাংবাদিক বলেন, “প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতিটি লিখিতভাবে দিয়েছেন। এটি একটি বড় পদক্ষেপ।”
কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা ও বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে সবটা নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “প্রক্রিয়াটি মাত্র শুরু হয়েছে। এটি কীভাবে কার্যকর হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।”
ডালাসের যে ভবন থেকে আততায়ী প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে গুলি করে বলে ধারণা করা হয়, হত্যাকাণ্ডের এক ঘণ্টা পর সেই ভবন থেকে তোলা ছবি
এ বিষয়ক সাম্প্রতিক যে নথি প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে হত্যাকাণ্ডের সময় সিআইএ লি হার্ভি অসওয়াল্ডের ওপর নিবিড় নজরদারি করেছিলো।
পল ল্যান্ডিস নামক ৮৮ বছর বয়সী এক সাবেক সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি খুব কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখেছেন। ২০২৩ সালে তিনি বলেছিলেন যে হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি গাড়ি থেকে একটি গুলি তুলে নেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার এই বিবরণ এই ধারণাকে জটিল করে তোলে যে প্রেসিডেন্ট কেনেডি ও টেক্সাসের গভর্নর জন কন্যালিকে একটি গুলিই আঘাত করেছিলো।
তবে জন কন্যালি তখন মোটরযানে থাকায় কোনোভাবে বেঁচে যান।
হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কলম দিয়ে আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন, সেটিকে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন মি. ট্রাম্প।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র হলেন রবার্ট এফ কেনেডির ছেলে। সম্পর্কে তিনি জন এফ কেনেডির ভাতিজা। হেলথ সেক্রেটারি হিসেবে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র তার চাচা এবং বাবার হত্যাকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
রবার্ট এফ কেনেডি লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি বলরুমে সিরহান সিরহান নামক একজন ফিলিস্তিনি ব্যক্তির হাতে নিহত হন। তিনি ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সিরহানের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন না যে সিরহান তার বাবাকে হত্যা করেছেন। তবে কেনেডি পরিবারের অন্য সদস্যরা তার এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিহত হন শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী জেমস আর্ল রে’র। কিং পরিবার অভিযোগ করেছেন যে রে একা কাজ করেননি, বরং এটি একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ।
বিবিসি নিউজ বাংলা