শবে বরাতের দুএকদিন পর থেকে নিজেরাই লেগে যেতাম গান লেখার কাজে। গলা ভালো ছিল বলে গাইতাম আমি, বাকিরা সুর মেলাত আমার সঙ্গে।
আগে উল্লেখ করেছি, ক্বাসিদার চল পুরনো চাকায়ই ছিল বেশি। আনোয়ার হোসেন চল্লিশ পঞ্চাশ দশকের কাসিদায় নিজেও অংশ নিতেন। তাঁর স্মৃতিচারণ উদ্ধৃতি করছি যদিও তা খানিকটা নীর্ঘ। এতে লেখকের অনুভবটা বোঝা যায়-
“মুখল আমল থেকেই কাসিনা গেয়ে সেহরি খাওয়ার জন্য ডেকে ওঠানোর প্রচলন ছিল ঢাকায়, খাজা আহসানউল্লাহর সময়ে সেটা আরো উৎকর্ষতা লাভ করে। আর আমাদের সময়ে তো আমি নিজেই। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কাসিদা গাইতাম, ঘুম থেকে তুলতাম মহল্লাবাসীদের, তাগিদ দিতাম সেহরি খাওয়ার।
রাতে ঘণ্টা চারেক ঘুমিয়ে সুবেহ সাদিকের দুঘন্টা বাকি থাকতেই উঠে বেড়িয়ে। পড়তাম কাসিদা পাওয়ার জন্য। কাজটা করতাম রাত দুটো থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত। ১০/১৫ জনের দল থাকত আমাদের, হাতে হ্যাজাক বাতি নিয়ে বের হতাম আমরা। শবে বরাতের দুএকদিন পর থেকে নিজেরাই লেগে যেতাম গান লেখার কাজে। গলা ভালো ছিল বলে গাইতাম আমি, বাকিরা সুর মেলাত আমার সঙ্গে। দু-একটা আসিদা মনে পড়ে এখনোঃ
আল্লাহ কা বাদ্দেকো হাম আয়ে জাগানে কো
হার দিল মে রামজান কি পায়গাম পওচায়েঙ্গে।
হো যায়েগি ইয়ে দুনিয়া রামজান মুবারাককি
আল্লাহ কা রাহমাত কি হাম তুফান উঠয়েঙ্গে
সারকারে দো আলাম কি উম্মাত কি সিতাম কিউ হো
ইসলাম কি কাশতি কো হাম পার লাগায়েঙ্গে
কিংবা
উঠো রোজদারো মোমেন
মাহে রামজান আগায়া
তখন ছিল পাকিস্তান আমল, তাই গান বেশিরভাগই হতো উর্দুতে। কখনো কাউকে বাংলায় কাসিদা গাইতে শুনেছি বলে মনে পড়ে না।
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ২৮)