অক্টোপাসের বাহুর আশ্চর্য ক্ষমতা
অক্টোপাস যখন তার আটটি বাহু লুকানো জায়গায় বাড়িয়ে শিকার খোঁজে, তখন শুধু স্পর্শ নয়—স্বাদও গ্রহণ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া আগের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি জটিল। হার্ভার্ডের মলিকুলার বায়োলজিস্ট রেবেকা সেপেলা জানিয়েছেন, অক্টোপাসের বাহু এমনভাবে গঠিত যে তারা জীবাণুর জগৎ থেকে তথ্য “গোপনে শোনে” বা সংগ্রহ করে।
চোখ যেখানে দেখে না, বাহু সেখানে তথ্য নেয়
অক্টোপাসের চোখ যেখানে পৌঁছায় না, তার বাহু সেখানে গিয়ে শিকার চিহ্নিত করে এবং চারপাশের পরিবেশ বোঝে। আগে থেকেই জানা ছিল, এরা বাহুর সাহায্যে ডিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে—সেগুলো ভালো আছে কি না বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে কি না তা নির্ধারণ করে। প্রতিটি বাহুর শত শত সাকার বা চোষণগ্রন্থিতে থাকে ১০ হাজারের বেশি রাসায়নিক-সংবেদনশীল রিসেপ্টর, যা ৫০ কোটি নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে স্নায়ুতন্ত্রে তথ্য পাঠায়।
স্বাস্থ্যবান আর দূষিত শিকার আলাদা করা
কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে ধাঁধা ছিল—কীভাবে অক্টোপাসের বাহু একটি সুস্থ ডিমকে পচা বা দূষিত ডিমের থেকে আলাদা করে বা কীভাবে একটি টাটকা খাওয়ার যোগ্য কাঁকড়াকে পচা ও বিষাক্ত কাঁকড়া থেকে আলাদা করে চেনে।
রহস্যময় ২৬টি রিসেপ্টর
এই প্রশ্ন আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন ড. সেপেলার দল অক্টোপাসের বাহুতে ২৬টি এমন রিসেপ্টর খুঁজে পায়, যাদের কোনো পরিচিত কাজ জানা ছিল না। তাই গবেষকেরা সুস্থ এবং অসুস্থ কাঁকড়া ও অক্টোপাসের ডিমের উপরিভাগ থেকে বিভিন্ন অণু সংগ্রহ করেন। ওইসব পৃষ্ঠের জীবাণু (মাইক্রোব) আলাদা করে ৩০০টি জীবাণু প্রজাতি দুইটি রিসেপ্টরের ওপর পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, মাত্র কিছু নির্দিষ্ট জীবাণুই ওই রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করতে পারে এবং সেগুলোর উপস্থিতি পচা কাঁকড়া ও মরতে থাকা ডিমে বেশি।
জীবাণুর জগৎই আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে
গবেষণার ফল বলছে, কেবল পৃষ্ঠ বা উপরের স্তর নয়—ওই পৃষ্ঠের জীবাণু গোষ্ঠী বা মাইক্রোবায়োমই অক্টোপাসের আচরণকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ অক্টোপাস তার শিকারের বা ডিমের স্বাস্থ্য বিচার করে মূলত তার উপরের জীবাণুর গঠন বিশ্লেষণ করে।