আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
একজন বুড়ো লোক একসময় জমিটার ধারে বিজ্ঞাপনের বোর্ডটার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ওঁর হাতে ছিল একটা বাতি, একটা বুরুশ আর কতগুলো গোটানো প্রাচীরপত্র। বিলবোর্ডের গায়ে ঘন করে আঠা মাখিয়ে উনি একখানা প্রাচীরপত্র তার ওপর সেটে দিলেন, তারপর হাত বুলিয়ে কাগজের ভাঁজগুলো দিলেন সমান করে। তারপর বালতিটা মাটিতে নামিয়ে আমায় ডাকলেন।
‘বাচ্চা, আমার পকেট থেকে মাচিস্টা বের কর দিকি হাত এক্কেবারে আঠায় মাখামাখি। বহুত আচ্ছা।’ দেশালাই বের করে একটা কাঠি জালিয়ে ওঁর পাইপের মুখে ধরাতে বললেন উনি।
পাইপ ধরে ওঠার পর নিচু হয়ে বালতিটা তুলতে গিয়ে ঘোঁত করে করে মুখে একটা আওয়াজ করলেন উনি। হেসে বললেন:
‘আহ, বুয়েছ কিনা, এই বুড়ো বয়েসটা বড় আরামের লয়! এককালে সব-সেরা মজুরদের সঙ্গে কামারশালের মস্ত ভারি হাতুড়ি পিটতাম। আর এখন কিনা এটুখানি বালুতি বইলেই হাত ভারি হয়ে ওঠে।’
বললুম, ‘বাতিটা আমি বয়ে দেব, ঠাকুন্দা? আমার হাতে ভারি হবে না। গায়ে খুব জোর আমার।’
আর পাছে বুড়ো মানুষটি রাজী না হন সেই ভয়েই যেন তাড়াতাড়ি বাতিটা টেনে নিলুম।
বুড়ো কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, ইচ্ছে হলি বইতে পার। কাজটা তাইলে তাড়াতাড়ি হয়।’
বেড়ার ধার ঘে’ষে-ঘে’ষে বহু রাস্তা পার হলুম আমরা।
আর যখনই আমরা থামতে লাগলুম, আমাদের পেছনে পথচারীদের ভিড় জমে যেতে লাগল। সকলেই উদ্গ্রীব আমরা কী পোস্টার লাগাচ্ছি তাই দেখবার জন্যে। কাজটায় বেশ মন বসে যেতে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা দিব্যি ভুলে গেলুম। যে-পোস্টারগুলো লাগাচ্ছিলুম আমরা, তাতে নানা রকমের স্লোগান লেখা ছিল। যেমন, একটাতে লেখা ছিল: ‘আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা ঘুম, আট ঘণ্টা বিশ্রাম’।
সত্যি কথা বলতে কী, এই ধরনের স্লোগান আমার কাছে কিছুটা গদ্যময় আর নীরস মনে হয়েছিল। বরং টকটকে লাল অক্ষরে মোটা মোটা করে নীল কাগজে লেখা পোস্টারটার আবেদন ছিল আমার কাছে ঢের বেশি। সেটাতে লেখা ছিল: ‘অস্ত্র-হাতে একমাত্র প্রলেতারিয়েতই পারে সমাজতন্ত্রের সমুজ্জল রাজত্ব ছিনিয়ে আনতে’।