শশাঙ্ক মণ্ডল
চণ্ডীদাস গোঁসাই এর বিখ্যাত পদ
(১) ভাবের ঘরে যে বাস করে গো তার কাছে করণ সারা ভাব না জেনে সাধন করে গো সে পাবে না অধরা। অথবা কামের মধ্যে প্রেমের মর্ম, বুঝে ওঠা হল ভার বুঝিবে রসিক জনা অরসিক কি বুঝিবে তার।
(২) কামের মধ্যে প্রেমের মর্ম বুঝে উঠা হল ভার বুঝিবে রসিক জনা অরসিক কি বুঝিবে তার।।
লালন ফকিরের পরবর্তকালে বাউল মত ও পথকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফকির পাঞ্জ শাহ। লালনের মতো তাঁর গান বাঙলাদেশের বাউলদের মুখে মুখে ফেরে। ফকির পাঞ্জ শাহ যশোর জেলায় শৈলকূপা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ১২৫৮ সালে। পরবর্তীকালে বাউলমত তিনি গ্রহণ করেন এবং এ সম্বন্ধে গান রচনা শুরু করেন। নিজ জেলা ছাড়া তার খ্যাতি খুলনা বরিশাল ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। পাঞ্জ শাহ অসংখ্য বাউল পদ রচনা করেছেন। তার অন্যতম বিখ্যাত পদ-
গুরু দয়া করো মোরে গো, বেলা ডুবে এল। তোমার চরণ পাবার আশে রইলাম বসে, সময় বয়ে গেল।
ফটিক গোঁসাই এর শিষ্য সতীশ বাউল খুলনা সাতক্ষীরা এলাকায় তার শিষ্যদের মধ্যে বাউল গান গেয়ে বেড়াতেন। তার বিখ্যাত গান-
দিনের বেলা জোয়ার এলে বসে থাকে নদীর কুলে যায় না তার কাছে হলে নিশিযোগে চাঁদের উদয় ফাঁদ পেতে চাঁদ ধরে নিয়েছে।
যশোর খুলনা বরিশাল ২৪ পরগণার সুন্দরবনাংশে অসংখ্য বাউল সে যুগে গান গেয়ে বেড়াত; বাউল বা ভাবগান এর প্রচলন সেদিন কৃষিজীবী মানুষগুলির মধ্যে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিল; বিভিন্ন স্থানে বাউলদের পাশাপাশি বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষরা গোপীযন্ত্র বাজিয়ে বাউল দেহতত্ত্ব বা ভাবগান গেয়ে সকলকে মাতিয়ে তুলতেন। স্বাধীনতা সমকালে খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে, দেবেনদাস, গিরিজা মালো, রাডুলি কাঠিপাড়ার বৈদ্যনাথ, ছিদাম বৈরাগী, তালার বিশ্বনাথ, তেতুলিয়ার সারদা মণ্ডল, এরা বেশ প্রতিষ্ঠ পেয়েছিলেন। কিন্তু বাউলের সাধনা অনেকটা নির্জনে নীরবে আত্মপ্রচারের আড়ালে থেকে সাধনা। সে যুগে ২৪ পরগণার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে বারাসত কামদেবপুর, বনগাঁ, গাইঘাটা এলাকায় প্রচুর বাউলের আখড়া ছিল। প্রসন্ন গোঁসাই ও তার শিষ্যরা এই এলাকায় বাউলদের নেতৃত্ব দিতেন।
বিখ্যাত বাউল সাধক দুদু শাহ এবং তাঁর শিষ্যরা হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতির এক মিলনসেতু রচনা করেছিলেন। “সমস্ত ধর্মের সংস্কার বর্জিত এক মহান মানবিক আদর্শ বাউলধর্মের সমস্ত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তার গানগুলির মধ্যে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে।”