“গত ৫ ফেব্রুয়ারী যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ীটি ক্রেন, বুলডেজার ব্যবহার করে নির্মমভাবে ধুলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য আরো যে সকল স্থাপনা পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে যে নির্মমতার সাথে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তা দেখে একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।
এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারও আমরা জানাতে চাই। কিন্তু কার কাছে জানাব? আইন শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলি হয় নীরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করেছে কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু কেন? তাদের জনগনের ট্যাক্স ও অর্থে লালন-পালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে, নিষ্ক্রিয় ভ‚মিকা পালন করার জন্যে? যখন তাদেরই নাকের ডগায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন তারা নীরব নিষ্ক্রীয় দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ কি, অপরাধের সহযোগী হবার সমার্থক নয়?
আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, কোন ধরণের গণ উত্তেজক সহিংসতা বা মব-ভায়োলেন্স কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদের কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের নাশকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাকেই উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা যেমন করেছে, তেমনি দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলেও, দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তার হাতও এতে শক্তিশালী হবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কোন অসত্য ভাষণ বা উস্কানীমূলক উক্তিকে অছিলা করে এমন কোন কাজ করা বা তাকে সমর্থন করা চলবে না যাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইতিমধ্যে যা ঘটানো হয়েছে সেইসব ঘটনাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।
৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তবর্তী সরকারের উপরেই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যে কোন দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শণ, স্থান কিংবা কোন স্থাপনা সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাড়ি বা অন্য কোন স্থাপনা- ঐ স্থানে কারা কোন সময় বসবাস করেছেন বা কাদের নাম জড়িত সেই নিরিখে বিচার্য নয়। মূল্যায়ন যে যেভাবেই করুক, তার উপরে তার সুরক্ষার প্রশ্নটি নির্ভর করে না। এটা সভ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর সব দেশেই এভাবে ঐতিহাসিক স্থান ও কীর্তিগুলি যথাযথ গুরুত্বের সাথে সুরক্ষা করা হয়। অনেক নির্মম নির্দয় শাসকের বাসভবনও দর্শকরা তাই দেখতে পান, তাদের কীর্তি-অপকীর্তি সম্পর্কেও বহু শত বছর পরও মানুষ জানতে পারেন। আমরা তাই ৫ ও ৬ ই ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তবর্তী সরকারের কাছে সবিস্তারে ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও এর জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
একই সাথে আমরা বলতে চাই, ৩২ নম্বর, ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে স্বৈরচার বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনের কোনই সম্পর্ক নেই। বরং এটা এক ধরনের গণ উত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শণ বলেই জনগনের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। যা ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকেই ¤øান করে দেয়। এটা আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয় যে তারুন্য আমাদের ভবিষ্যত বিনির্মানের মূল শক্তি হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, সেই তরুনদের একাংশকে কোন দেশী বা বিদেশী অপশক্তি বিপথে পরিচালিত করতে নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে কিনা, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটাও আজ খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি।”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
২. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
৩. খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী
৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআই-বি
৫. রাশেদা কে. চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৬. শামসুল হুদা, নিবাহী পরিচালক, এএলআরডি
৭. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
৮. ড. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
৯. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি
১০. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
১১. নুর খান, মানবাধিকার কর্মী
১২. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. ড. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. ড. মোহম্মদ সেলিম হোসেন, অধ্যাপক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
১৬. শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, পরিচালক, সিডিএ, দিনাজপুর
১৭. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
১৮. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
১৯. মনীন্দ্র কুমার নাথ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
২০. সাঈদ আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী
২১. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২২. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৩. ব্যারিস্টার শাহাদত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৪. অ্যড. রেজাউল হক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৫. হানা শামস আহমেদ, গবেষক ও আদিবাসী অধিকার কর্মী
২৬. মুক্তাশ্রী চাকমা, মানবাধিকার কর্মী ও গবেষক