০২:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, উৎকোচ গ্রহণের জন্য হেষ্টিংস অনেকগুলি লোক নিযুক্ত করেন; তাহারা পরস্পর পরস্পরের বিষয় বিদিত ছিল না। চেৎ সিংহসংক্রান্ত কোন উৎকোচ কান্তবাবু অবগত ছিলেন না বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। সম্ভবতঃ হেষ্টিংসের ফারসী সেরেস্তার মুন্সী তাহা জানিতেন এবং তাঁহারই হিসাবপুস্তকে সে সমস্ত বিষয় লিখিত থাকার সম্ভাবনা। চেৎ সিংহের উৎকোচ্ কেন, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশস্থ কোন উৎকোচের বিষয় কান্তবাবু জানিতেন না। তিনি ফারসী ভাষার বিশেষ-রূপ অভিজ্ঞ না হওয়ায়, হেষ্টিংসের মুন্সী তৎসমুদায় লিখিয়া রাখিতেন।

কান্তবাবু বাঙ্গালী বলিয়া, বাঙ্গলার যাবতীয় হিসাবপত্র বাঙ্গলাতেই লিখিয়া রাখিতেন। যদিও তিনি সর্ব্বত্রই ছায়ার ন্যায় হেষ্টিংসের অনুবর্তন করিতেন, কি বাঙ্গলা, কি উত্তর-পশ্চিম, কোথাও তাঁহার গতির বিরাম ছিল না, তথাপি বাঙ্গলা ভিন্ন অন্য স্থানের বিষয় তাঁহার ‘সম্পূর্ণই অজ্ঞাত ছিল। মহামতি বার্ক ইহা স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছেন। হেষ্টিংসের প্রিয়পাত্র বলিয়া, কান্তবাবু সর্ব্বত্র তাঁহার সঙ্গে থাকিতেন। হেষ্টিংসের ভীষণ অত্যাচারের সময় তিনিও বারাণসীতে উপস্থিত ছিলেন, এবং প্রভুর কঠোর প্রকৃতির কার্যাবলী প্রতিনিয়ত অবলোকন করিতেন।

তিনি চেৎসিংহের অনুনয়ক্রমে একবার স্বীয় প্রভুকে ক্ষমা অবলম্বন করিতে অনুরোধ করেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হন নাই। এই অনুরোধের মূলে চেৎ সিংহ প্রদত্ত কোন চাকচিক্যশালী পদার্থ ছিল, অথবা তিনি হিন্দুর প্রধান তীর্থক্ষেত্রে হিন্দুরাজার প্রতি অবৈধ অত্যাচার অবলোকন করিয়া স্বীয় প্রভুকে শান্তভাব অবলম্বন করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন, তাহা আমরা সবিশেষ অবগত নহি। কেহ কেহ প্রথমোক্ত কারণের নির্দেশ করিয়া থাকেন বটে, কিন্তু আমরা যখন সে বিষয়ের কোন বিশেষ প্রমাণ পাই নাই, তখন সাহস করিয়া সে কথা বলিতে পারি না। সাক্ষাৎসম্বন্ধে তিনি অত্যাচারে লিপ্ত ছিলেন না বলিয়া হয়ত হিন্দুজনোচিত কোমলতাপ্রবণ হইয়া, হেষ্টিংস সাহেবকে অনুরোধ করিতে পারেন।

কিন্তু উক্ত বিষয়ের কোন বিশেষ প্রমাণ না থাকায়, আমরা সে প্রসঙ্গ পরিত্যাগ করিলাম। প্রতিবৎসর হেষ্টিংস চেৎসিংহের নিকট যাহা দাবী করিতেন, চেৎ সিংহ তাহাই প্রদান করিতেন; ক্রমে তিনি সর্ব্বস্বান্ত হইয়া, প্রবল ক্লেশতরঙ্গমধ্যে নিপতিত হইলেন। অবশেষে তিনি আর হেষ্টিংস সাহেবের লালসার তৃপ্তি করিতে পারিলেন না। হেষ্টিংস ইহাতে অতিমাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া, চেৎসিংহকে রাজ্যচ্যুত করিতে কৃতসঙ্কল্প হন। ১৭৮১ খৃঃ অব্দের ১৪ই আগষ্ট তিনি কাশীতে, উপস্থিত হন। সঙ্গে অনেক লোক গমন করিয়া-ছিল। কিন্তু সৈন্যসংখ্যা তাদৃশ অধিক ছিল না।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭৩)

১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, উৎকোচ গ্রহণের জন্য হেষ্টিংস অনেকগুলি লোক নিযুক্ত করেন; তাহারা পরস্পর পরস্পরের বিষয় বিদিত ছিল না। চেৎ সিংহসংক্রান্ত কোন উৎকোচ কান্তবাবু অবগত ছিলেন না বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। সম্ভবতঃ হেষ্টিংসের ফারসী সেরেস্তার মুন্সী তাহা জানিতেন এবং তাঁহারই হিসাবপুস্তকে সে সমস্ত বিষয় লিখিত থাকার সম্ভাবনা। চেৎ সিংহের উৎকোচ্ কেন, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশস্থ কোন উৎকোচের বিষয় কান্তবাবু জানিতেন না। তিনি ফারসী ভাষার বিশেষ-রূপ অভিজ্ঞ না হওয়ায়, হেষ্টিংসের মুন্সী তৎসমুদায় লিখিয়া রাখিতেন।

কান্তবাবু বাঙ্গালী বলিয়া, বাঙ্গলার যাবতীয় হিসাবপত্র বাঙ্গলাতেই লিখিয়া রাখিতেন। যদিও তিনি সর্ব্বত্রই ছায়ার ন্যায় হেষ্টিংসের অনুবর্তন করিতেন, কি বাঙ্গলা, কি উত্তর-পশ্চিম, কোথাও তাঁহার গতির বিরাম ছিল না, তথাপি বাঙ্গলা ভিন্ন অন্য স্থানের বিষয় তাঁহার ‘সম্পূর্ণই অজ্ঞাত ছিল। মহামতি বার্ক ইহা স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছেন। হেষ্টিংসের প্রিয়পাত্র বলিয়া, কান্তবাবু সর্ব্বত্র তাঁহার সঙ্গে থাকিতেন। হেষ্টিংসের ভীষণ অত্যাচারের সময় তিনিও বারাণসীতে উপস্থিত ছিলেন, এবং প্রভুর কঠোর প্রকৃতির কার্যাবলী প্রতিনিয়ত অবলোকন করিতেন।

তিনি চেৎসিংহের অনুনয়ক্রমে একবার স্বীয় প্রভুকে ক্ষমা অবলম্বন করিতে অনুরোধ করেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হন নাই। এই অনুরোধের মূলে চেৎ সিংহ প্রদত্ত কোন চাকচিক্যশালী পদার্থ ছিল, অথবা তিনি হিন্দুর প্রধান তীর্থক্ষেত্রে হিন্দুরাজার প্রতি অবৈধ অত্যাচার অবলোকন করিয়া স্বীয় প্রভুকে শান্তভাব অবলম্বন করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন, তাহা আমরা সবিশেষ অবগত নহি। কেহ কেহ প্রথমোক্ত কারণের নির্দেশ করিয়া থাকেন বটে, কিন্তু আমরা যখন সে বিষয়ের কোন বিশেষ প্রমাণ পাই নাই, তখন সাহস করিয়া সে কথা বলিতে পারি না। সাক্ষাৎসম্বন্ধে তিনি অত্যাচারে লিপ্ত ছিলেন না বলিয়া হয়ত হিন্দুজনোচিত কোমলতাপ্রবণ হইয়া, হেষ্টিংস সাহেবকে অনুরোধ করিতে পারেন।

কিন্তু উক্ত বিষয়ের কোন বিশেষ প্রমাণ না থাকায়, আমরা সে প্রসঙ্গ পরিত্যাগ করিলাম। প্রতিবৎসর হেষ্টিংস চেৎসিংহের নিকট যাহা দাবী করিতেন, চেৎ সিংহ তাহাই প্রদান করিতেন; ক্রমে তিনি সর্ব্বস্বান্ত হইয়া, প্রবল ক্লেশতরঙ্গমধ্যে নিপতিত হইলেন। অবশেষে তিনি আর হেষ্টিংস সাহেবের লালসার তৃপ্তি করিতে পারিলেন না। হেষ্টিংস ইহাতে অতিমাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া, চেৎসিংহকে রাজ্যচ্যুত করিতে কৃতসঙ্কল্প হন। ১৭৮১ খৃঃ অব্দের ১৪ই আগষ্ট তিনি কাশীতে, উপস্থিত হন। সঙ্গে অনেক লোক গমন করিয়া-ছিল। কিন্তু সৈন্যসংখ্যা তাদৃশ অধিক ছিল না।