শ্রী নিখিলনাথ রায়
৫ই হেষ্টিংস সাহেব রাজা চেৎ সিংহকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, রাজা ইংরেজরাজের অধীন হইয়াও, বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করিয়াছেন, এবং কাশীরাজপথে প্রকাশ্য ভাবে অত্যাচার করিয়াছেন। রাজা গবর্ণরের পত্র পাইয়া স্তম্ভিত হই-লেন, এবং বুঝিতে পারিলেন যে, তাঁহার অদৃষ্টচক্র পরিবর্তিত হইয়াছে; নতুবা তাঁহার নামে এরূপ মিথ্যা অপরাধের সৃষ্টি হইবে কেন? তিনি পত্র প্রাপ্ত হইয়া লিখিয়া পাঠাইলেন যে, হেষ্টিংস সাহেবের যাবতীয় দাবী তিনি পূরণ করিয়াছেন এবং হেষ্টিংস সাহেব তাঁহার নামে যে সমস্ত অপরাধ আনয়ন করিয়াছেন, তাহা তিনি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেন।
হেষ্টিংস এই পত্র পাইয়া, আপনাকে অবমানিত মনে করিলেন এবং রেসিডেন্টকে রাজার প্রাসাদ আক্রমণ করিয়া, তাঁহাকে বন্দী করিতে আদেশ দিলেন। রেসিডেন্ট কতিপয় সিপাহী লইয়া রাজাকে বন্দী করিতে গেলে, রাজা বশ্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু ইহাতেও হেষ্টিংসের মনস্তষ্টি ঘটিল না। রাজাকে বন্দী করিবার কথা শুনিয়া নগরের যাবতীয় লোক অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠে। বিশেষতঃ কাশীক্ষেত্রে হিন্দুমাত্রে এরূপ অবমাননা কখনও সহ্য করিতে পারে না। যাহারা রাজাকে “মহতী দেবতা হোষা নররূপেণ তিষ্ঠতি” বলিয়া জানে, তাহারা পুণ্যভূমির পবিত্র হৃদয়ে বিশ্বেশ্বর অন্নপূর্ণার সেবক, হিন্দুরাজাকে অবমানিত দেখিয়া কেমন করিত্রা সহ্য করিবে। কাজেই তাহারা সকলে দলবদ্ধ হইতে লাগিল।
এই সময়ে ইংরেজদিগের জনৈক চোপদার রাজার অবমাননা করায়, তাহারা ইংরেজদিগকে আক্রমণ করিল। রাজার সৈন্যগণ এই সংবাদ অবগত হইয়া, রামনগর দুর্গ হইতে নদী পার হইয়া নগরবাসী-দিগের সঙ্গে যোগ দিল। তাহাদের তরবারির আঘাতে ইংরেজ সিপাহী-গণের ছিন্ন দেহ ধূল্যবলুণ্ঠিত হইতে লাগিল। ইত্যবসরে চেৎসিংহ কাশীপ্রাসাদ হইতে পলায়ন করিয়া, নদী পার হইয়া রামনগর দুর্গে আশ্রয় লন এবং হেষ্টিংস সাহেবকে পুনর্ব্বার বশ্যতা স্বীকার করিয়া লিখিয়া পাঠান। রাজা কান্তবাবুকে বিশেষ অনুরোধ করিয়া লিখিয়া পাঠাইয়া-ছিলেন যে, হেষ্টিংস সাহেব যাহাই আদেশ করিবেন, তিনি তৎক্ষণাৎ তাহাই অবনত মস্তকে প্রতিপালন করিতে বাধ্য থাকিবেন।* কান্ত বাবু চেৎ সিংহের প্রার্থনাক্রমে হেষ্টিংসকে অনেকরূপে অনুরোধ করিয়াছিলেন।
এই সময় বাস্তবিকই তিনি অশেষ প্রকার চেষ্টা করেন; কিন্তু হেষ্টিংসের মন কিছুতেই বিচলিত করিতে পারিলেন না। – চেৎ সিংহের প্রলোভনে হউক, অথবা তীর্থক্ষেত্রে হিন্দুরাজের প্রতি অত্যাচারে কষ্ট বোধ করিয়াই হউক, কান্ত বাবু যে এ জন্য হেষ্টিংসকে অনুরোধ করিয়াছিলেন, তজ্জন্য তিনি হিন্দুমাত্রেরই প্রশংসার পাত্র। যদি তিনি ইহাতে কৃতকার্য্য হইতে পারিতেন, তাহা হইলে তীর্থক্ষেত্রে প্রকৃত পুণ্যের সঞ্চয় করিয়া, চিরদিনই হিন্দুর নিকট আদরণীয় হইতেন,