বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে চীনের অ্যানিমেটেড অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম, “ন্য চা-২”। গত মাসে মুক্তির পর থেকে এই মুভিটি বিশ্বব্যাপী ১৩৭ বিলিয়ন ইউয়ান আয় করেছে। শুধু তাই নয়, এই সিনেমার দৃশ্য চীনজুড়ে সাংস্কৃতিক পর্যটনের একটি নতুন ঢেউ সৃষ্টি করেছে। সিনেমায় ধারণ করা দৃশ্যগুলো দেখে মানুষ ছুটছে সেই স্থানগুলো ভ্রমণ করতে, যা স্থানীয় পর্যটন শিল্পকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
“ন্য চা-২” সিনেমায় দর্শকদের মাত করে দিয়েছে তার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের দৃশ্য। এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা অ্যানিমেটেড ফিল্মে পরিণত হয়েছে, যা ডিজনির “ইনসাইড আউট ২”-এর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়াও, এটি এখন বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ আয়ের মুভিগুলোর তালিকায় ৮ম স্থানে রয়েছে।
প্রাচীন চীনের মিং রাজবংশের একটি পৌরাণিক কাহিনির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। যেখানে চীনের চিয়াংসি প্রদেশের শাংরাও শহরের ছানছিং পর্বত দেখানো হয়েছে। বলা হয়ে থাকে এই স্থানেই ন্য চা’র গুরু তাওবাদ চর্চা করতেন। সিনেমাটি ব্যপক জনপ্রিয়তার কারণে এই স্থানটি এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে হয়ে উঠেছে।
“ন্য চা ২” মুভিটির জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে চিয়াংসি প্রদেশ ফিল্ম-থিমযুক্ত পর্যটন রুট তৈরি করেছে, যা সিনেমাপ্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। এই উদ্যোগটি সিনেমার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। মুভিটি শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং এটি স্থানীয় পর্যটনকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।
চিয়াংসি প্রদেশের কানসু ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক আলেকজান্দ্রোস র্যালিস বলেন, “ন্য চা” এর কিংবদন্তি যাত্রার পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি ছানছিং পর্বত ভ্রমণে গিয়েছিলেন। শুধু পর্বতের দৃশ্য উপভোগ করতে নয়, বরং ওই ভ্রমণ ছিল তার জন্য আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ কিছুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা। সিনেমাটির মাধ্যমে তিনি প্রাচীন চীনের সংস্কৃতি এবং তাওবাদের ঐতিহ্যের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে পেরেছেন।
কানসু ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক আলেকজান্দ্রোস র্যালিস বলেন, “আমি মুভি থেকে জানতে পেরেছি যে এটি চীনের একটি নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সম্পর্কিত। তাই আমার ছেলের সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ সে মুভিটি খুব পছন্দ করেছে। সে অর্ধেক চীনা অর্ধেক কানাডিয়ান। চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সে খুব আগ্রহী।’
শুধু চীনেই নয় বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছে ন্য চা-২। এর পৌরাণিক কাহিনি, বীরত্ব এবং আত্ম-আবিষ্কারের বিষয়গুলো মুভিটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং দর্শকদের চিন্তা ও অনুভূতিকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
“ন্য চা ২” অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়, এরপরপরই শাংরাও শহরের রেলওয়ে স্টেশনে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি মুভিটির বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা এবং চীনের সংস্কৃতি ও স্থানগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রমাণ করে।
প্রাচীন তাওবাদী ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে ছানছিং পর্বত । এই স্থান বিদেশি পর্যটকদের চীনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার অন্যতম একটি স্থান। মালয়েশিয়ান এক পর্যটক বলেছেন, “এটি এমন একটি স্থান যা ‘ন্য চা ২’ এর সাথে যুক্ত, এবং আমি মুভিটি দেখার জন্য উৎসুক। আমি শুনেছি এটি ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় মুক্তি পেয়েছে।”
ইতোমধ্যে অ্যানিমেটেড ব্লকবাস্টার মুভিটি ২৮ কোটি ২০ লাখ বার দেখেছে দর্শকরা।
সিএমজি বাংলা
Leave a Reply