সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত এক বছরের মধ্যে, পশ্চিমা দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের যুদ্ধজাহাজের মোবাইলতা বৃদ্ধি করেছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো চীনের সীমান্তের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদানের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করা।
চীন সাগরের দাবি ও বিরোধ
চীন দাবি করে যে, প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অংশ তার। তবে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইও এই অঞ্চলের অংশ হিসেবে নিজেদের দাবি তুলে ধরেছে।
পশ্চিমা ও জাপানের সামরিক কার্যক্রম
- ইউরোপীয় কার্যক্রম: ২০২৪ সালে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের ফ্রিগেট ও অন্যান্য যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা জানান, এই কার্যক্রম ASEAN সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য নেভিগেশনের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক আইনের সম্মান এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
- মাল্টি-ন্যাশনাল অনুশীলন: ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার চালিত এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার চার্লস দে গলের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের আশেপাশে বহুজাতিক অনুশীলন করা হয়েছে। ফিলিপাইনের সাথে যৌথ সামরিক অনুশীলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
- অন্য বড় পদক্ষেপ: ইউএস ও জার্মানির বৃহৎ যুদ্ধজাহাজ মালয়েশিয়ায় দ্বারদর্শন করেছে এবং নেভিগেশনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়া, জাপানের মারিটাইম সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স মালয়েশিয়ার রয়েল নেভির সাথে দ্বিপাক্ষিক অনুশীলনে অংশ নিয়েছে এবং ২০২৫ সালের জন্য আরও দুইটি সফরের পরিকল্পনা করেছে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বাণিজ্যিক প্রভাব
দক্ষিণ চীন সাগর কেবল নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্যও অপরিহার্য। ২০২৩ সালে EU ও ASEAN দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৫৫ বিলিয়ন ইউরো, যা EU বাণিজ্যের প্রায় ৫% এবং ASEAN বাণিজ্যের ১০% হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দৃশ্য
- চীনের আগ্রাসন ও পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া: সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো কলিন কোহ জানান, ২০২১ সাল থেকে চীনের আগ্রাসী কার্যকলাপ ও আঞ্চলিক অনিশ্চয়তার কারণে পশ্চিমা দেশের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- নিয়মিত পরিদর্শন: কেন্দ্র ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জনরাল্ড পোলিং উল্লেখ করেছেন, ২০২৪ সালে চীনের কোস্ট গার্ড প্রায় প্রতিদিনই মালয়েশিয়ার তেল ও গ্যাস কার্যক্রমের নিকটবর্তী এলাকায় পরিদর্শন করেছে।
- ভবিষ্যতের প্রতিক্রিয়া: একজন ফিলিপাইনের বিশেষজ্ঞের মতে, ভবিষ্যতে চীন অর্থনৈতিক, সামুদ্রিক ও মানসিক ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
পশ্চিমা দেশ ও জাপানের এই সামরিক পদক্ষেপ দক্ষিণ চীন সাগরে নেভিগেশনের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক আইনের সম্মান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বার্তা প্রদান করছে। ASEAN সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত এই কার্যক্রম থেকে বোঝা যায় যে, উভয় শক্তি—ওয়াশিংটন ও বেইজিং—শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে চাচ্ছে।