সারাক্ষণ রিপোর্ট
আমেরিকার পররাষ্ট্র সচিব রুবিও জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিবেশী মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি। এল সালভাডর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রেখে মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করার ব্যাপারটি তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
এই অঞ্চলজুড়ে মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও অবৈধ অভিবাসন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
- বেশিরভাগ অভিবাসী তাদের নিজ দেশ বা মধ্যবর্তী ট্রানজিট পয়েন্ট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করে।
- পানামা, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের নতুন সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
- মেক্সিকো ও তাদের প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের সঙ্গেও কিছু বাণিজ্যসংক্রান্ত মতবিরোধ আছে, কিন্তু মাদক কার্টেল ও অবৈধ অভিবাসন রোধে তারা এখন কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
মেক্সিকো কি “নারকো-স্টেট”?
রুবিওর মতে, মাদক কার্টেলের প্রভাব মেক্সিকোর বহু এলাকায় বিস্তৃত। দুর্নীতি ও অপরাধী গোষ্ঠীর প্রভাবে বিচারব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও মেক্সিকান সরকার সম্প্রতি কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করেছে, তবুও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা বাস্তবায়নে বাধা তৈরি হচ্ছে। রাজনীতিক ও সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড নিয়মিত ঘটছে, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, মেক্সিকোর নিজস্ব স্বার্থের জন্যও হুমকি।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও এর প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে জরুরি ক্ষমতার অধীনে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। রুবিও জানিয়েছেন, এর ফলে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে, যদিও মাদক প্রবাহ এখনও কমেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাদক চোরাকারবার বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রাখছেন, যেখানে শুল্ক আরোপের বিকল্পও উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।
পানামায় “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” বাতিল ও খাল নিয়ন্ত্রণ
পানামা সফরে গিয়ে রুবিও প্রেসিডেন্ট মুলিনোর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশটিকে “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” থেকে বের করে আনার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন। পরবর্তীতে ব্ল্যাকরক নামে একটি প্রতিষ্ঠান পানামা খালের কাছে থাকা দুইটি বন্দর কিনতে চায়। রুবিওর মত, পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণ করেছিল এবং এটি চীনের প্রভাবমুক্ত রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি।
- প্রেসিডেন্ট মুলিনো যুক্তরাষ্ট্রপন্থী হলেও খাল পরিচালনা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে।
- রুবিও জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ চীনা সরকারের হাতে যেতে দিতে চায় না, কারণ এটি পশ্চিম গোলার্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।
ভেনেজুয়েলা ও মারিয়া কোরিনা ম্যাকাডোর ভবিষ্যৎ
বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা ম্যাকাডো ভেনেজুয়েলায় থেকেই মাদুরো সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রুবিও জানান, মাদুরো সরকার ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে, যা উদ্বেগের কারণ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সমস্যার বড় অংশ হলো মাদুরো সরকার নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চায় না।
- বাইডেন আমলের অর্থনৈতিক ছাড় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে বাতিল করেছেন।
- মাদুরো সরকার যদি ইরানকে সামরিক ঘাঁটি গড়ার সুযোগ দেয় বা অবৈধ অভিবাসন বাড়াতে সহায়তা করে, যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
ভেনেজুয়েলার নির্বাচনী অনিয়ম ও ভবিষ্যৎ
রুবিওর দাবি, মারিয়া কোরিনা ম্যাকাডো’র দল আগের নির্বাচন জিতলেও মাদুরো সরকার জালিয়াতির মাধ্যমে ফলাফল পাল্টেছে। মাদুরো সরকার কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ভেনেজুয়েলাকে দেওয়া আর্থিক সুবিধা ছিল বড় ভুল, যা ট্রাম্প প্রশাসন এখন আবার প্রত্যাহার ও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে এগোচ্ছে।
রুবিওর সাফল্যের মানদণ্ড
ওয়াশিংটন ডিসি-র দ্বিদলীয় মহলে রুবিও এখন একজন দক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি চান, নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াতে চান না; বরং ইউক্রেনসহ চলমান যুদ্ধগুলো দ্রুত শেষ করতে চান। রুবিওর মতে, তাঁর সাফল্যের মানদণ্ড হলো—ট্রাম্পের নির্দেশনা মেনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষিত রেখে বৈশ্বিক কূটনীতি পরিচালনা করা।
সাক্ষাৎকারের উপসংহার
আলোচনার শেষে র্যাচেল ক্যাম্পোস-ডাফি ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে রুবিওর অবদানের প্রশংসা করেন। জবাবে রুবিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, ট্রাম্পের ম্যান্ডেট কার্যকর করা ও দেশের স্বার্থ রক্ষাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
সংক্ষিপ্ত মূল বিষয়াবলি
- যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধে মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অভিবাসন রোধে জোর দিচ্ছে।
- মেক্সিকোতে মাদক কার্টেল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে।
- শুল্ক আরোপের হুমকিতে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
- পানামা খালে চীনা প্রভাব ঠেকাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
- ভেনেজুয়েলায় মাদুরো সরকারের নির্বাচনী অনিয়ম ও ইরানের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ।
- রুবিওর মূল লক্ষ্য: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।