সারাক্ষণ রিপোর্ট
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় আসছে রবিবার। হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
রায় ঘোষণার দিন-তারিখ
- তারিখ: ১৬ মার্চ রবিবার
- কোন বেঞ্চ: বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ
- মামলার অবস্থান: সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রবিবারের কার্যতালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে
মামলার সংক্ষিপ্ত পটভূমি
- ঘটনার তারিখ: ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর
- স্থান: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শেরেবাংলা হল
- ভিকটিম: আবরার ফাহাদ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী
- মামলা দায়ের: আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন
পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
অভিযোগপত্রের মূল বক্তব্য
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ‘ছাত্রশিবিরের কর্মী’ সন্দেহে আবরারের ওপর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন। এরপর তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়
- তারিখ: ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর
- আদালত: ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১
- রায়:
- ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড
- ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রায় ঘোষণার পর বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) নথি ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে পৌঁছায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
ডেথ রেফারেন্স ও আপিল
- ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন, যাকে ডেথ রেফারেন্স বলা হয়।
- একই সঙ্গে আসামিরা জেল আপিল বা নিয়মিত আপিল দায়ের করতে পারেন।
- আবরার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর দণ্ডপ্রাপ্তরা কারাগার থেকে জেল আপিল দাখিল করেন। এরপর নিয়মিত আপিলও করা হয়।
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল—সবগুলো একযোগে শুনানি হয়। ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শুনানির পর তা গ্রহণ করা হয়।
হাইকোর্টে শুনানি
- শুনানি শুরু: ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মাধ্যমে
- পুনরায় শুনানি: ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে (প্রতি কার্যদিবসে, মাঝখানে মাত্র একদিন বাদে)
- শুনানি শেষ: ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি
- রায় অপেক্ষমাণ: এরপর যেকোনো দিন রায় ঘোষণার (সিএভি) সিদ্ধান্ত নেন হাইকোর্ট বেঞ্চ
অংশগ্রহণকারী আইনজীবীগণ
- রাষ্ট্রপক্ষ: অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী, রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান, সুমাইয়া বিনতে আজিজ।
- আসামিপক্ষ: জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ।
দণ্ডপ্রাপ্তদের তালিকা
- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জন:
১. মেহেদী হাসান রাসেল
২. মো. অনিক সরকার
৩. মেহেদী হাসান রবিন
৪. ইফতি মোশাররফ সকাল
৫. মো. মনিরুজ্জামান মনির
৬. মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন
৭. মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ
৮. মো. মুজাহিদুর রহমান
৯. খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর
১০. হোসাইন মোহাম্মদ তোহা
১১. মো. শামীম বিল্লাহ
১২. এ এস এম নাজমুস সাদাত
১৩. মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম
১৪. মুনতাসির আল জেমি
১৫. মো. শামসুল আরেফিন রাফাত
১৬. মো. মিজানুর রহমান
১৭. এস এম মাহমুদ সেতু
১৮. মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান
১৯. এহতেশামুল রাব্বি তানিম
২০. মুজতবা রাফিদ
- এদের মধ্যে তিনজন (মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ) পলাতক।
- মুনতাসির আল জেমি ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
- যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৫ জন:
১. মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন
২. মো. আকাশ হোসেন
৩. মুয়াজ আবু হুরায়রা
৪. অমিত সাহা
৫. ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না
উল্লেখ্য, সকল আসামিই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী।
ফাইনাল মন্তব্য:
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ রায় নির্ধারণ করবে আসামিদের শেষ আইনি ভাগ্য। রায়কে ঘিরে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক আগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ চলছে।
Leave a Reply