পাঞ্জাবের প্রভাবশালী রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী বিক্রম সিং মজিঠিয়ার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের মাদক-চোরাচালান মামলার তদন্তে উঠে এসেছে বিপুল অর্থপাচারের তথ্য। বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) ও পাঞ্জাব ভিজিল্যান্স ব্যুরো (ভিবি) যৌথভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ৫৪০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ অর্থ দেশি ও বিদেশি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সাদা টাকা বানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার অভিযান
২৬ জুন ভোরে অমৃতসরের বাসভবনসহ রাজ্যের ২৫টি স্থানে অভিযান চালিয়ে ভিজিল্যান্স ব্যুরো মজিঠিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ১৩(১)(বি) ও ১৩(২) ধারায় প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) দাখিল হয়েছে, যেখানে অনিয়মিতভাবে সম্পদ জমা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কী বলছে মামলা
এফআইআরের সাত পৃষ্ঠার বয়ানে শেল কোম্পানি, রহস্যজনক বিদেশি লেনদেন ও অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিস্তারিত লেনদেন তালিকা রয়েছে।
– ধারা ১৩(১)(বি): সরকারি পদে থেকে কারও কাছে জিম্মা সম্পদ নিজের স্বার্থে ব্যবহার বা দখলে রাখলে অপরাধ।
– ধারা ১৩(২): সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও জরিমানা।
মাদক মামলার পূর্বসূত্র
মজিঠিয়া এর আগে এনডিপিএস আইনের ২৫, ২৭এ ও ২৯ ধারায় রুজু হওয়া মাদক-সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন। আগস্ট ২০২২-এ হাই কোর্ট থেকে জামিন এবং এপ্রিল ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্ট জামিন বহাল রাখে। শর্ত ছিল—সাক্ষী প্রভাবিত না করা ও গণমাধ্যমে মন্তব্য না করা। মার্চ ২০২৫-এ এসআইটি তাঁকে হাওয়ালা লেনদেন নিয়ে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
৫৪০ কোটি টাকার অর্থপাচার কোন পথে
এসআইটি ও ভিজিল্যান্স ব্যুরো বলছে, মাদক বাণিজ্যের টাকাই নানা পথ ঘুরে মজিঠিয়ার প্রভাবাধীন ব্যবসায় ঢুকেছে। অন্তত ২২ সহযোগী ব্যক্তি ও একাধিক প্রতিষ্ঠান এই চক্রে জড়িত। তিনটি মূল স্থানে তল্লাশিতে ৩০-এর বেশি মোবাইল, পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি আইপ্যাড, দু’টি ডেস্কটপ, হাতে লেখা ডায়েরি ও সারায়া ইন্ডাস্ট্রিজ সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে।
সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
মজিঠিয়া ও তাঁর স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক সম্পদ বৃদ্ধি মেলে না। কর ফাঁকি ও আর্থিক জালিয়াতি যাচাই করতে রাজস্ব ও প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও তদন্তে নেমেছে।
আইনগত অগ্রগতি
• বৃহস্পতিবার মোহালির আদালতে মজিঠিয়াকে তোলা হবে; আইনজীবীরা দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।
• তদন্ত চলমান; বাজেয়াপ্ত ডিভাইস ও নথির ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে আরও গ্রেপ্তার ও জব্দের সম্ভাবনা আছে।
• ভিজিল্যান্স ব্যুরো বলছে, আদালতে প্রমাণ উপস্থাপন করে বিচারিক ফলাফলে পৌঁছানোই তাদের লক্ষ্য।
দুর্নীতি দমন আইনের নতুন মামলায় মজিঠিয়ার আইনি চাপ বাড়ল। মাদক-সংশ্লিষ্ট অর্থপাচারের জটিল নেটওয়ার্কে তাঁর ভূমিকাই এখন তদন্তের কেন্দ্রে। আগামী শুনানিতে আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে পাঞ্জাবের রাজনৈতিক অঙ্গন।