০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
রাঙামাটির আনারস: শতবর্ষী ঐতিহ্য ও রপ্তানির সম্ভাবনা বাংলাদেশে জঙ্গি আছে, কিন্তু ‘জঙ্গি নেই’ মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কী হয়েছিল- ছাত্রদের কেন এই প্রতিক্রিয়া? এশিয়া ও আফ্রিকার নারী কৃষকদের ক্ষমতায়নে ব্র্যাককে রকফেলার ফাউন্ডেশনের সহায়তা ভারতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে সায় নেই দিল্লির বিএনপি নেতাদের কয়েক দফায় চীন সফর কী বার্তা দিচ্ছে? হোলি আর্টিজান হামলা: বাংলাদেশের হৃদয়ে রক্তাক্ত স্মৃতি ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া গুমে সেনাসদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-২৫) পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২১১)

এত ওএসডি আগে কখনও হয়নি

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৪০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • 23

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমানে দেশে নজিরবিহীনভাবে ৫১৭ জন সরকারি কর্মকর্তা ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সর্বোচ্চ ১২১ জন “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হয়েছেন, যা মূলত ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তনের সময় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অথচ ওএসডি থাকা সত্ত্বেও তারা পূর্ণ বেতন ও ভাতা পাচ্ছেন, যার মাধ্যমে জনস্বার্থের তহবিলে বড় চাপ পড়ছে।
৫ আগস্টের পর প্রশাসনিক কারণে ওএসডি
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বহু কর্মকর্তা বদলি বা ওএসডি হয়েছেন, এমনকি কেউ কেউ অবসরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ধারণা করা হয় যে এদের মধ্যে অনেকে পূর্ববর্তী সরকার (আওয়ামী লীগ)–ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হওয়া ব্যক্তিরা অফিসে কেবল স্বাক্ষর করে চলে যান; কোনো কাজ বা দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয় না।
থাকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ওএসডি বৃদ্ধির কারণ
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার দাবি করলেও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে ওএসডি করা উচিত নয়। কমিশন সুপারিশ করেছিল, ওএসডি কর্মকর্তাদের এভাবে অকারণে বেতন দেওয়ার বদলে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাময়িকভাবে কাজ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই সুপারিশ প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে; বরং একযোগে অনেককে ওএসডি করে ফেলা হচ্ছে।


পুলিশসহ অন্যান্য ক্যাডারেও ওএসডি
ওএসডি পদের তালিকায় শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডার নয়, ৮২ জন পুলিশ কর্মকর্তা (ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি) এবং অন্যান্য ক্যাডারের আরও প্রায় ২০০ জন রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে যে এদের অনেকে ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
ওএসডির আর্থিক বোঝা
২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী, সচিবদের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা, সিনিয়র সচিবদের আরো ৫ হাজার টাকা বেশি। অতিরিক্ত সচিবরা ৬৬ হাজার থেকে ৭৬,৪৯০ টাকা, যুগ্ম সচিবরা ৫৬,৫০০ থেকে ৭৪,৪০০ টাকা এবং উপসচিবরা ৫০,০০০ থেকে ৭১,২০০ টাকা মূল বেতন পান। এ ছাড়া সবাই ৫০% হাউস রেন্ট ও ১,৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পান।
২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই ধাপে ৩,৬০৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল, যার পেছনে সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ১৫০.৯১ কোটি টাকা। বর্তমানে ৫১৭ জন কর্মকর্তার পেছনে ঠিক কত ব্যয় হচ্ছে তার সুস্পষ্ট তথ্য নেই, তবে প্রতি মাসেই এটি বিশাল অঙ্কের চাপ তৈরি করছে।
বর্তমান ৫১৭ জন ওএসডির বিভাজন
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫১৭ জন কর্মকর্তা ওএসডি রয়েছেন। এর মধ্যে:
• ১৩ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব
• ২ জন গ্রেড-১ কর্মকর্তা
• ৩৩ জন অতিরিক্ত সচিব
• ৭৬ জন যুগ্ম সচিব
• ১৩৬ জন উপসচিব
• ১৫৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব
• ৯৪ জন সহকারী সচিব
• ৮ জন সিনিয়র সহকারী প্রধান
এদের মধ্যে ১২১ জন (৫ আগস্টের পর) “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হয়েছেন। অন্যরা পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ, ছুটি বা প্রেষণজনিত কারণে ওএসডি-তে আছেন।


সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বাস্তবতা
প্রাক্তন সচিবরা মনে করেন, ওএসডি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা দরকার। যদি প্রকৃত অভিযোগ থাকে, তাহলে স্বচ্ছ তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে; দক্ষতা কম থাকলে তাদের উপযুক্ত কাজে নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘ সময় ওএসডি রাখলে শুধু সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে। সরকার বলছে, প্রশাসনে ভারসাম্য আনা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ, তবে বিশ্লেষকদের বড় অংশ মনে করেন এটি অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কৌশল।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রশাসনে ওএসডি-র সংখ্যা এত বেশি আগে কখনো দেখা যায়নি। শীর্ষপর্যায়ের এতোজন কর্মকর্তাকে একসঙ্গে ওএসডি রাখা যেমন সরকারি অর্থের অপচয়, তেমনি দক্ষ জনবলকেও নিষ্ক্রিয় করে রাখছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ওএসডির অপব্যবহার বন্ধে স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের সত্যিকারের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থাই ওএসডি পদ্ধতি নিয়ে চলমান বিতর্ক ও অপব্যবহারের অবসান ঘটাতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙামাটির আনারস: শতবর্ষী ঐতিহ্য ও রপ্তানির সম্ভাবনা

এত ওএসডি আগে কখনও হয়নি

০৬:৪০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমানে দেশে নজিরবিহীনভাবে ৫১৭ জন সরকারি কর্মকর্তা ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সর্বোচ্চ ১২১ জন “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হয়েছেন, যা মূলত ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তনের সময় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অথচ ওএসডি থাকা সত্ত্বেও তারা পূর্ণ বেতন ও ভাতা পাচ্ছেন, যার মাধ্যমে জনস্বার্থের তহবিলে বড় চাপ পড়ছে।
৫ আগস্টের পর প্রশাসনিক কারণে ওএসডি
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বহু কর্মকর্তা বদলি বা ওএসডি হয়েছেন, এমনকি কেউ কেউ অবসরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ধারণা করা হয় যে এদের মধ্যে অনেকে পূর্ববর্তী সরকার (আওয়ামী লীগ)–ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হওয়া ব্যক্তিরা অফিসে কেবল স্বাক্ষর করে চলে যান; কোনো কাজ বা দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয় না।
থাকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ওএসডি বৃদ্ধির কারণ
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার দাবি করলেও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে ওএসডি করা উচিত নয়। কমিশন সুপারিশ করেছিল, ওএসডি কর্মকর্তাদের এভাবে অকারণে বেতন দেওয়ার বদলে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাময়িকভাবে কাজ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই সুপারিশ প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে; বরং একযোগে অনেককে ওএসডি করে ফেলা হচ্ছে।


পুলিশসহ অন্যান্য ক্যাডারেও ওএসডি
ওএসডি পদের তালিকায় শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডার নয়, ৮২ জন পুলিশ কর্মকর্তা (ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি) এবং অন্যান্য ক্যাডারের আরও প্রায় ২০০ জন রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে যে এদের অনেকে ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
ওএসডির আর্থিক বোঝা
২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী, সচিবদের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা, সিনিয়র সচিবদের আরো ৫ হাজার টাকা বেশি। অতিরিক্ত সচিবরা ৬৬ হাজার থেকে ৭৬,৪৯০ টাকা, যুগ্ম সচিবরা ৫৬,৫০০ থেকে ৭৪,৪০০ টাকা এবং উপসচিবরা ৫০,০০০ থেকে ৭১,২০০ টাকা মূল বেতন পান। এ ছাড়া সবাই ৫০% হাউস রেন্ট ও ১,৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পান।
২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই ধাপে ৩,৬০৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল, যার পেছনে সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ১৫০.৯১ কোটি টাকা। বর্তমানে ৫১৭ জন কর্মকর্তার পেছনে ঠিক কত ব্যয় হচ্ছে তার সুস্পষ্ট তথ্য নেই, তবে প্রতি মাসেই এটি বিশাল অঙ্কের চাপ তৈরি করছে।
বর্তমান ৫১৭ জন ওএসডির বিভাজন
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫১৭ জন কর্মকর্তা ওএসডি রয়েছেন। এর মধ্যে:
• ১৩ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব
• ২ জন গ্রেড-১ কর্মকর্তা
• ৩৩ জন অতিরিক্ত সচিব
• ৭৬ জন যুগ্ম সচিব
• ১৩৬ জন উপসচিব
• ১৫৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব
• ৯৪ জন সহকারী সচিব
• ৮ জন সিনিয়র সহকারী প্রধান
এদের মধ্যে ১২১ জন (৫ আগস্টের পর) “প্রশাসনিক কারণে” ওএসডি হয়েছেন। অন্যরা পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ, ছুটি বা প্রেষণজনিত কারণে ওএসডি-তে আছেন।


সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বাস্তবতা
প্রাক্তন সচিবরা মনে করেন, ওএসডি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা দরকার। যদি প্রকৃত অভিযোগ থাকে, তাহলে স্বচ্ছ তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে; দক্ষতা কম থাকলে তাদের উপযুক্ত কাজে নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘ সময় ওএসডি রাখলে শুধু সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে। সরকার বলছে, প্রশাসনে ভারসাম্য আনা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ, তবে বিশ্লেষকদের বড় অংশ মনে করেন এটি অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কৌশল।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রশাসনে ওএসডি-র সংখ্যা এত বেশি আগে কখনো দেখা যায়নি। শীর্ষপর্যায়ের এতোজন কর্মকর্তাকে একসঙ্গে ওএসডি রাখা যেমন সরকারি অর্থের অপচয়, তেমনি দক্ষ জনবলকেও নিষ্ক্রিয় করে রাখছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ওএসডির অপব্যবহার বন্ধে স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের সত্যিকারের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থাই ওএসডি পদ্ধতি নিয়ে চলমান বিতর্ক ও অপব্যবহারের অবসান ঘটাতে পারে।