১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক অবস্থান

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • 28

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি থেকে আসে। তাদের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রধান লক্ষ্য, কারণ অনেকেই আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। সরকারি চাকরির নিরাপত্তা তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, কারণ বেসরকারি খাতে প্রবেশের সুযোগ ও প্রস্তুতি তাদের কাছে কম থাকে।

দুটি ভিন্ন বাস্তবতা

ফাহাদ ও সজল একই বছরে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করে। ফাহাদ ঢাকার একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, যেখানে সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, ইন্টার্নশিপ ও নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ পায়। তার হাতে একাধিক চাকরির প্রস্তাব ছিল, এবং সে এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

অন্যদিকে, সজল ঢাকার বাইরের একটি বিখ্যাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। একাডেমিকভাবে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ে। তার ইন্টার্নশিপ ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ ছিল না, ফলে চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করলেও বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে পছন্দের চাকরি পায়নি।

ঢাকাকেন্দ্রিক চাকরির বাজার

বাংলাদেশের চাকরির বাজারে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা একটি বিশেষ সুবিধা পায়। ঢাকায় চাকরির সুযোগ বেশি, যেখানে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে। তবে বিভাগীয় শহরগুলোতেও এমন প্রতিষ্ঠান বিরল, ফলে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ বা পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ কম পায়।

ঢাকায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, বইমেলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা ও যোগাযোগের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের সুযোগ সীমিত।

সরকারি চাকরির প্রতি নির্ভরতা

ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত সরকারি চাকরির ওপর বেশি নির্ভরশীল। তারা নিয়মিত সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেয়, তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন পড়াশোনা করেও কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না এবং বেসরকারি খাতে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক একজন অধ্যাপক বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরির প্রতি বেশি আকৃষ্ট। কিন্তু তারা বেসরকারি চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রস্তুতির অভাবে পিছিয়ে পড়ে।”

ঢাকার শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা

ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়। তারা সফট স্কিল, সমস্যা সমাধান, ও নেতৃত্ব গুণ অর্জনে মনোযোগ দেয়। নিয়মিত কর্পোরেট ইভেন্ট, কর্মশালা ও অতিথি বক্তার লেকচার তাদের পেশাগত জীবনে এগিয়ে রাখে।

একটি স্বনামধন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান, আলী হাসান, বলেন, “ঢাকার শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে বিশেষ সুবিধা পায় না, বরং তারা শিক্ষাজীবনেই বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। আর এ আত্মবিশ্বাসই তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”

সমাধানের পথ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবশ্যই তাদের কারিকুলাম আপডেট করতে হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে, এবং শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ বাড়াতে হবে।

ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আরও বেশি কর্মসংস্থানমুখী কার্যক্রমের আয়োজন করে, যেমন ক্যারিয়ার মেলা, সেমিনার, ও কর্মশালা, তাহলে শিক্ষার্থীরা পেশাদার জীবনে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। একইসঙ্গে, নিয়োগদাতাদেরও উচিত ঢাকার বাইরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশি সুযোগ দেওয়া।

ড. মাহফুজ রহমান, একজন গবেষক ও অধ্যাপক, বলেন, “ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত প্ল্যাটফর্মের অভাব। সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক কার্যক্রম যদি সমগ্র দেশে বিস্তৃত করা যায়, তাহলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে।”

অতএব, ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাঠামোগত পরিবর্তন ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চাকরির বাজারে সমতা আনা সম্ভব।

কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক অবস্থান

০৪:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি থেকে আসে। তাদের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রধান লক্ষ্য, কারণ অনেকেই আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। সরকারি চাকরির নিরাপত্তা তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, কারণ বেসরকারি খাতে প্রবেশের সুযোগ ও প্রস্তুতি তাদের কাছে কম থাকে।

দুটি ভিন্ন বাস্তবতা

ফাহাদ ও সজল একই বছরে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করে। ফাহাদ ঢাকার একটি স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, যেখানে সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, ইন্টার্নশিপ ও নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ পায়। তার হাতে একাধিক চাকরির প্রস্তাব ছিল, এবং সে এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

অন্যদিকে, সজল ঢাকার বাইরের একটি বিখ্যাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। একাডেমিকভাবে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ে। তার ইন্টার্নশিপ ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ ছিল না, ফলে চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করলেও বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে পছন্দের চাকরি পায়নি।

ঢাকাকেন্দ্রিক চাকরির বাজার

বাংলাদেশের চাকরির বাজারে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা একটি বিশেষ সুবিধা পায়। ঢাকায় চাকরির সুযোগ বেশি, যেখানে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে। তবে বিভাগীয় শহরগুলোতেও এমন প্রতিষ্ঠান বিরল, ফলে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ বা পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ কম পায়।

ঢাকায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, বইমেলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা ও যোগাযোগের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের সুযোগ সীমিত।

সরকারি চাকরির প্রতি নির্ভরতা

ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত সরকারি চাকরির ওপর বেশি নির্ভরশীল। তারা নিয়মিত সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেয়, তবে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন পড়াশোনা করেও কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না এবং বেসরকারি খাতে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক একজন অধ্যাপক বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরির প্রতি বেশি আকৃষ্ট। কিন্তু তারা বেসরকারি চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রস্তুতির অভাবে পিছিয়ে পড়ে।”

ঢাকার শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা

ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়। তারা সফট স্কিল, সমস্যা সমাধান, ও নেতৃত্ব গুণ অর্জনে মনোযোগ দেয়। নিয়মিত কর্পোরেট ইভেন্ট, কর্মশালা ও অতিথি বক্তার লেকচার তাদের পেশাগত জীবনে এগিয়ে রাখে।

একটি স্বনামধন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান, আলী হাসান, বলেন, “ঢাকার শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে বিশেষ সুবিধা পায় না, বরং তারা শিক্ষাজীবনেই বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। আর এ আত্মবিশ্বাসই তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”

সমাধানের পথ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবশ্যই তাদের কারিকুলাম আপডেট করতে হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে, এবং শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ বাড়াতে হবে।

ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আরও বেশি কর্মসংস্থানমুখী কার্যক্রমের আয়োজন করে, যেমন ক্যারিয়ার মেলা, সেমিনার, ও কর্মশালা, তাহলে শিক্ষার্থীরা পেশাদার জীবনে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। একইসঙ্গে, নিয়োগদাতাদেরও উচিত ঢাকার বাইরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশি সুযোগ দেওয়া।

ড. মাহফুজ রহমান, একজন গবেষক ও অধ্যাপক, বলেন, “ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত প্ল্যাটফর্মের অভাব। সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক কার্যক্রম যদি সমগ্র দেশে বিস্তৃত করা যায়, তাহলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে।”

অতএব, ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাঠামোগত পরিবর্তন ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চাকরির বাজারে সমতা আনা সম্ভব।