প্রদীপ কুমার মজুমদার
পাঁচ শত খ্রীষ্টপূর্বে ‘লেখবার জয় ফলক’ কথাটি বিভিন্ন ভারতীয় সাহিত্যে উল্লেখিত হতে দেখা যায়। অন্ততপক্ষে বৌদ্ধ শাস্ত্র বিনয়পিটক, জাতক, ললিতবিস্তার প্রভৃতি গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদগণ জ্যোতিবিজ্ঞানের নানা দুরূহ সমস্তা অঙ্কনের সাহায্যে সমাধানের জন্য ফলকের উপর গুলো ছড়িয়ে দিয়ে আঁক জোক করতেন।
তাছাড়াও আমরা জানি যে ছাত্রদের শিক্ষার জয় ফলকের (board) উপর ধূলো ছড়িয়ে আদুলের অগ্রভাগ দিয়ে সংখ্যা এবং তৎসংক্রান্ত নানা সমস্তার সমাধান করা হোত। কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, হয়তো তখনকার দিনে কাগজের দুষ্প্রাপ্যতা ছিল বলেই এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। ভারতীয় গণিত-শাস্ত্রে অব্য কেউ কেউ যেমন ব্রহ্মগুপ্ত, দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য প্রমুখেরা এই পদ্ধতিকে ধূলিকর্মা বলেছেন।
ব্রহ্মগুপ্ত ব্রাহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তের দশম অধ্যায়ের ৬২ তম শ্লোকে বলেছেন।
“নাবার্থে। জ্ঞাতৈরপি তন্দ্রৈরার্যভট বিষ্ণুচন্দাদৈঃ।
যো ব্রাহ্ম ধূলিকর্ম বিদাচার্যবং ভবন্তি তক্ষ।
অর্থাৎ মমার্থ হচ্ছে-যে পণ্ডিত আর্যভট, বিষ্ণুচন্দ্র প্রভৃতির গণনাশিক্ষা করেছেন প্রসগুলি অপেক্ষা যিনি ব্রহ্মগুপ্ত লিখিত ধূলিকর্মা পাঠ করবেন তিনি অধিক জানবেন।
ব্রহ্মগুপ্ত ধূলিকর্মাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বলে মনে করতেন এবং সেইহেতু
ব্রাহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তের দশম অধ্যায়ে ৬৭-তম শ্লোকে বলেছেন:
গুরুণা ন ধূলিকর্ম প্রতিক ককারিণে প্রদাতব্যম্।
তত্ত্বা স্বকৃত প্রণাশঃ কুরুতে প্রতিকছু কং যংস্থা।
মমার্থ হচ্ছে-যিনি ধূলিকর্মা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন না তিনি নিন্দার যোগ্য এবং তাঁর যশ অবলুপ্ত হতে পারে।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-১২২)