সারাক্ষণ রিপোর্ট
ক্রমাগত কমছে মসুর চাষ ও উৎপাদন
দেশে মসুর ডালের চাষ ও উৎপাদন গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে কমছে।
সরকারি তথ্যমতে, এই পতনের পেছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানায়, গত পাঁচ বছরে দেশে মসুর চাষের জমি ৭৫,৭০০ হেক্টর কমে গেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে মসুর উৎপাদন ছিল ২,৫৮,৫০০ টন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেমে এসেছে মাত্র ১,৬৬,৩০০ টনে।
যেখানে দেশে বছরে ৭ লাখ টনের মতো মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে, সেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে খুব অল্প—ফলে প্রায় ৬ লাখ টন আমদানি করতে হচ্ছে।
কৃষকরা মসুর চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কেন?
১৫ জনের বেশি কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসুর চাষে তাদের আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে:
এ কারণে অনেক কৃষক এখন মসুরের বদলে পেঁয়াজ, ভুট্টা, গম ও কলা চাষে ঝুঁকছেন।
নড়াইলের কৃষক হাসান আলী আগে ৬ বিঘা জমিতে মসুর চাষ করতেন, কিন্তু ফলন কমে যাওয়ায় এবার করেছেন ৪ বিঘায়। তিনি বলছেন, এখন ভুট্টা চাষে বেশি লাভ হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কৃষক মজিবর রহমান গত বছরের তুলনায় এবার কম জমিতে চাষ করেও ২৪ মণ মসুর পেয়েছেন, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলন।
মসুরের দাম বেড়েছে:
এই মৌসুমে প্রতি মণ মসুর বিক্রি হচ্ছে ৩,৪০০–৩,৬০০ টাকায়, যেখানে গত বছর ছিল ২,৪০০–২,৮০০ টাকা।
ঝিনাইদহের কৃষক আজিজুর রহমান বলছেন, “এ বছর ফলন ও দাম ভালো হলেও আগের বছরগুলোতে অবস্থা ভালো না থাকায় অনেকেই মসুর চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।”
ফরিদপুরের কামাল হোসেন জানান, আগে বারি-২, বারি-৩, বারি-৪ জাতের মসুর চাষ করতেন, কিন্তু ফলন কম থাকায় কৃষকেরা আগ্রহ হারিয়েছেন। এবার তিনি বারি-৮ জাতের মসুর চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।
পাইকারি বাজারে ধীরগতি, মিল মালিকরা বিপাকে
মাগুরার নতুন বাজার দেশের অন্যতম বড় মসুর ডালের পাইকারি বাজার।
সেখানে ব্যবসায়ী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, আগে প্রতিদিন ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ মণ মসুর কেনাবেচা হতো, এখন তা নেমে এসেছে ১,৫০০ থেকে ১২,০০০ মণে।
ফরিদপুরের এক ডাল মিল মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, দেশীয় মসুরের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ছোট মিলগুলো সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ডাল কিনতে পারছে না। সরকারকে আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে, ফলে অনেক ছোট মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
Leave a Reply