সারাক্ষণ রিপোর্ট
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আমদানি পণ্যের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্ক (কাউন্টার ট্যারিফ) আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রপ্তানিকারকেরা ক্রয়াদেশ স্থগিত কিংবা মূল্যছাড়ের চাপে পড়েছেন। বিশেষত, চামড়া ও তৈরি পোশাক খাতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিল বা মূল্যছাড়ের অনুরোধ পেয়েছে।
নতুন পাল্টা শুল্কের মূল তথ্য
- যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত: সব আমদানিকারক দেশের জন্য গড়ে ন্যূনতম ১০% শুল্ক আরোপ; আলাদা হিসেবে কিছু দেশের জন্য হার আরো বেশি।
- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে: রপ্তানি পণ্যে ৩৭% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
- শুল্ক নির্ধারণের সূত্র: সংশ্লিষ্ট দেশের বাণিজ্য–ঘাটতিকে (যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে) এর অর্ধেক শতাংশ শুল্ক হিসেবে আরোপ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৭৪% হয়; তার অর্ধেক ৩৭% কার্যকর।
নতুন এই শুল্ক হার প্রয়োগে ইতোমধ্যে কিছু মার্কিন ক্রেতা অর্ডার স্থগিত রেখে মূল্য নিয়ে পুনরায় আলোচনা চেয়েছে।
চামড়াজাত পণ্যে স্থগিতাদেশ
এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টস
- অবস্থান: ঢাকার সাভার
- অর্ডারের অবস্থা: চলতি সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়ার ব্যাগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা ছিল।
- স্থগিতের নির্দেশ: গত রোববার হঠাৎ মার্কিন ক্রেতা জাহাজীকরণ বন্ধ রাখতে বলে; তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কসংক্রান্ত আলোচনার পরে মূল্যছাড় নির্ধারণ করতে চায়।
- প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি: প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার ৯০% যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এখন তাঁরা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আলোচনার ফলের অপেক্ষায়।
অন্যান্য চামড়া রপ্তানিকারকরাও একই রকম নির্দেশনা বা মূল্যছাড়ের অনুরোধ পেয়েছেন।
পোশাক খাতে সবচেয়ে বড় প্রভাব
- রপ্তানির শেয়ার: বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০%-এর বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে।
- যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১৮% গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
- বর্তমান পরিস্থিতি: নতুন এই শুল্কঘোষণার পর পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
উইকিটেক্স–বিডি উদাহরণ
- মূল্যমান: ৩ লাখ ডলারের একটি অর্ডার যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতা স্থগিত করেছে।
- কাঁচামাল: প্রয়োজনীয় কাপড় ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছিল, ফলে কোম্পানি ক্ষতির মুখে।
- আরেকটি অর্ডার: ১.৫ লাখ ডলারের অর্ডারও স্থগিত হয়েছে।
- ক্রেতার দাবি: মার্কিন ক্রেতা নিজে পণ্যের বাড়তি শুল্কের বোঝা বহন করতে না পেরে, বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের দাম কমাতে বলছে।
অন্যান্য বায়িং হাউসের প্রতিক্রিয়া
- একটি বায়িং হাউস প্রতি মাসে ১২ লাখ ডলারের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করত; এখন তারা জুনের অর্ডার স্থগিত করেছে এবং জুলাই মাসেও পণ্য পাঠাতে না করার নির্দেশ দিয়েছে।
- ইতোমধ্যে জাহাজীকরণ হয়ে যাওয়া পণ্যের জন্যও ক্রেতারা মূল্যছাড় দাবি করছে।
জরুরি বৈঠক ও করণীয়
- বিজিএমইএর উদ্যোগ: ঢাকার একটি হোটেলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন ও অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা এক জরুরি বৈঠকে বসেন।
- শঙ্কা: দ্রুত কোনো সমাধান না হলে রপ্তানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
- বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক: যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ডগুলো (ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ইত্যাদি) বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ৩৭% শুল্ক নিজ দায়িত্বে বহন করতে বলছে এবং নতুন অর্ডার স্থগিতের নির্দেশও দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এর প্রভাব ইউরোপের বাজারেও পড়তে পারে। কারণ, সেখানে প্রতিযোগীতা বেড়ে যাবে।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পাল্টা শুল্ক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশকে রপ্তানি খাতে বাড়তি চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। চামড়া ও পোশাক খাতে অর্ডার স্থগিত বা মূল্যছাড়ের অনুরোধ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি আরো গুরুতর হতে পারে। দ্রুত সমাধান না হলে রপ্তানি আয় ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করছেন।