অন্যান্য সেবাকাজ
আমরা ছেলেটিকে দেখাশুনা করিব।” রাত্রের আহার শেষ করিয়া আমি সেই বাড়িতে যাইয়া পৌঁছিলাম। যাইয়া দেখি, অতুল আগেই আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। ছেলেটির বয়স পাঁচ-ছয় বৎসর। সারা গায়ে পাঁচড়া। শুকনো কাকলাসের মতো চেহারা। বহুদিনের রোগে হাড় কয়খানাই মাত্র অবশিষ্ট আছে। ছেলেটা কিছুতেই বিছানায় শুইবে না। কোলে করিয়া বসিয়া থাকিতে হইবে। বন্ধুদের মধ্যে অতুল এমন ব্যক্তি যাহার ঘৃণা-পিত্ত বলিয়া কোনো জ্ঞান ছিল না। সে-ই ছেলেটিকে কোলে লইয়া বসিল।
আমি পাখার বাতাস করিতে লাগিলাম। তখন ছিল গরমের দিন। এইজন্য একে তো জামা-কাপড় গায়ে রাখা যায় না. তার উপরে এই জ্বরের রোগীকে কোলে করিয়া বসিতে তাহার উত্তাপও গায়ে আসিয়া লাগে। তাহার উপর সেই ঘরে ভীষণ মশার উপদ্রব। রোগীকে কামড়াইয়া সেই মশা আমাদের গায়ে আসিয়া কামড়াইতেছিল। ইহাতে সেই রোগীর কালাজ্বর আমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হইবার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তখন আমরা সেবার মনোবৃত্তি লইয়া সেখানে উপস্থিত হইয়াছি। এসব চিন্তা একবারও মনে আসিত না।
ভাবিতাম, এইভাবে লোকসেবা করিতে করিতে যদি মৃত্যু হয়, সেই মৃত্যু আমাদের পরম বাঞ্ছনীয়। পৃথিবীর যেসব মহাপুরুষ লোকসেবার জন্য জীবন উৎসর্গ করিয়াছেন তাঁহাদের কাহিনী ছিল আমাদের আদর্শ। আমরা ভাবিতাম, এ জীবনটা যে খোদাতায়ালা দিয়াছেন, তাহারই কাজে ইহাকে ক্ষয় করিয়া দিব।
অনেকক্ষণ ছেলেটিকে কোলে রাখিয়া অতুল ছেলেটিকে আমার কোলে দিয়া পাখার বাতাস করিতে লাগিল। আমি কিছু সময় ছেলেটিকে কোলে রাখিয়া আবার অতুলের কোলে দিলাম। এইভাবে রাত প্রায় চারটা বাজিল। ছেলেটির বাপ-মা পাশেই ঘুমাইতেছিল। ভাহাদিগকে ডাকিয়া দিয়া আমরা রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িলাম। এতরাত্রে আমি বাড়ি যাইতে পারিব না। সুতরাং অতুলদের বাড়িতে যাইয়াই ঘুমাইব।
আমরা পুল পার হইয়া গেলি পুষ্করিণীর তীরে আসিলাম। তাহারই পূব পাড়ে নরেনবাবু মাস্টারের বাড়ি। কেন যেন নরেন মাস্টারের প্রতি অতুলের রাগ ছিল। অতুল তিন-চারটি ঢিল কুড়াইয়া লইয়া নরেন মাস্টারের টিনের ঘরের চালার উপর ধুমাধুম মারিতে লাগিল। নরেন মাস্টার ঘুম হইতে জাগিয়া বাতি জ্বালাইলেন। কিন্তু চোরের ভয়ে ঘরের বাহিরে আসিলেন না। আমরা হাসিতে হাসিতে অতুলদের বাড়িতে আসিয়া ঘুমাইয়া পড়িলাম।
চলবে…..