বড়ু
দাদি উঠিয়া কেরোসিনের কুপি জ্বালায়। খাবারগুলি নামাইয়া দেই।
“এ কিরে ভাই। এই বুঝি সামান্য খাবার? আমি বুড়ো মানুষ এত খাইতে পারিব? ও বস্তু এদিকে আয়। দেখ, তোর ভাই কত কি খাবার আনিয়াছে? ও-ঘর হইতে কুপি জ্বালাইয়া বস্তু আসে। দাদি আর নাতনি দুইজনে মিলিয়া খাবারগুলি খায়। কোথাকার তৃপ্তিতে যেন মন ভরিয়া ওঠে। বেশিক্ষণ দেরি করি না। যদি কেহ কিছু মনে করে। যাইবার সময় চাচি উঠিয়া হাতের মধ্যে একটি পান গুঁজিয়া দেয়। “শ্বশুর। পান না খাইয়া যাইবার পারিবে না।”
যে-কয়দিন দেশে থাকি চব্বিশ ঘণ্টা বড়ুদের বাড়ি যাইতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ঘন ঘন যাই না। ওরা গরিব মানুষ। আমাকে লইয়া যদি এই পাপলেশহীন মেয়েটির কোনো বদনাম হয় তবে ওরা সহ্য করিতে পারিবে না।
কোনো কোনোদিন অনেকগুলি সন্দেশ কিনিয়া আনিয়া দাদিকে বলি, “দাদি। দাদা তো তোমাকে কত মেঠাই-মণ্ডা কিনিয়া আনিয়া খাওয়াইত। আজ দাদা তো নাই। দাদার কাজটা আজ আমিই করি।”
দাদি সন্দেশের ঠোঙাটি হাতে লইয়া বড়ই খুশি। “ও বড়ু, এদিকে আয় দেখ, তোর ভাই আজ আবার কি আনিয়াছে।”
বড়ু আসিয়া দাদির কাছে বসে। অধিকাংশ সন্দেশই দাদি নাতনিকে দিয়া খাওয়ায়। দাদি হয়তো মনে মনে জানে কার জন্য এই সন্দেশ আনিয়াছি।
দাদিকে জিজ্ঞাসা করি, “আচ্ছা দাদি। কও তো তোমাকে দাদা কেমন করিয়া আদর করিত?”
দাদি কিছুতেই বলিতে চাহে না। লজ্জায় যেন দাদি ঘরের কনে-বউটি হইয়া যায়। “দাদি তোমার পায়ে পড়ি, তোমাদের কালের এতটুকু প্রেমালাপের কথা বল।”
আমার বলার ভঙ্গি দেখিয়া বড়ু হাসিয়া কুটি কুটি হয়। দাদি বলে, “দেখ ত পাগলের কাণ্ড। সেই কালের কথা কি আমার মনে আছে?”
“আচ্ছা! কও না দিদি? আমরা তোমার নাতি-নাতনি। আমাদের কাছে তোমার শরম কিসের? বিয়ের রাইতে দাদা তোমাকে কেমন করিয়া আদর করিয়াছিল?”
দাদি আরম্ভ করে, “আরে ভাই! সেকথা কি আমার মনে আছে? পাঁচ-ছয় বছর বয়সে আমার বিয়া হইয়াছিল। একদিনের কথা তবে বলি। তোমার দাদা আম পাড়িতেছে। আমি তলায় দাঁড়াইয়া আছি। তোমার দাদা করিল কি, গাছ হইতে নামিয়া এদিক-ওদিক চাহিয়া দেখিল কেউ লক্ষ করিতেছে কি না। তারপর পাঁচ-ছয়টি আম আমার কোঁচড়ে ঢালিয়া দিল।
চলবে…..