১০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
চন্দনা নদী: গোপালগঞ্জের জীবনরেখা, স্মৃতি, সংগ্রাম ও স্বপ্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৮) আমেরিকার রাজনৈতিক সংকট ও বিভ্রমের দীর্ঘ ছায়া কঠোর আশ্রয়(অ্যাসাইলাম) নীতি নিয়ে লেবার দলে বিদ্রোহের সুর ফিলিপাইনে পরপর দুই টাইফুনে মৃত্যু, নিখোঁজ ও ঘরবাড়ি হারানোর বেদনায় ডুবল দেশ ব্রাজিলে কোপ৩০ আলোচনার শেষ সপ্তাহে তীব্র টানাপোড়েন বিশ্বজুড়ে জেনারেশন জেড-এর বিক্ষোভ কি সত্যিই পরিবর্তন আনতে পারবে? বেইজিং-এর পালটা আঘাত: আমেরিকান চিপের বিকল্প খুঁজে নিজস্ব পথ গড়ছে চিন বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষুধা সংকটের সতর্কতা, তহবিল ঘাটতিতে বিপদে ডব্লিউএফপি” লরা লুমারের গোপন ক্ষমতার নেটওয়ার্ক—হোয়াইট হাউস কাঁপছে এক ইনফ্লুয়েন্সারের হাতেও

হংকংয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ

হংকংয়ে ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করেছেন ১,১৩৮ জন – যা ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে বেশি। স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্স হংকং নামের একটি এনজিও শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থার মতে, ২০২৩ সালের তুলনায় আত্মহত্যার সংখ্যা প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। তারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার এবং প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

আত্মহত্যার হারে রেকর্ড উর্ধ্বগতি

সংস্থার চেয়ারম্যান হেইম্যান্স ওয়ং হন-চি জানিয়েছেন, গত বছর প্রতি লাখ জনে আত্মহত্যার হার ছিল ১৫.১ – যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন।

Suicide prevention in Hong Kong: pushing boundaries while building bridges  - The Lancet Regional Health – Western Pacific

বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ৩০–৩৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে হার ১৯.০৫ থেকে বেড়ে ২৪.৩৮ হয়েছে। ৪০–৪৯ বছর বয়সীদের হার ২২.০৬ থেকে বেড়ে ২৭.৪৬ এ পৌঁছেছে।

ওয়ং বলেন, “পুরুষরা অর্থনৈতিক চাপ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। এ ছাড়া এই বয়সী পুরুষদের ঘাড়ে পরিবার চালানোর দায়িত্বও থাকে, যা মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।”

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় কারণ

ওয়ং জানিয়েছেন, গত বছরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। “আমরা চাই মানুষ বুঝুক – আত্মহত্যা জীবনের সমস্যার সমাধান নয়,” বলেন তিনি।

“অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সহজ নয়, তবে জীবনের বেশির ভাগ সমস্যা সাময়িক। এই সময়টা পার করে গেলে নতুন করে আশার আলো দেখা যায়। আমরা চাই, যারা কঠিন সময় পার করছেন, তাদের পাশে থাকতে।”

সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে পুরুষরা পিছিয়ে

Hong Kong recorded 1,138 suicides last year, highest number since 2003 |  South China Morning Post

২০২৪ সালে আত্মহত্যা করা ১,১৩৮ জনের মধ্যে ৭৬২ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৩৭৬ জন নারী। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৭.৫ শতাংশ ছিলেন বেকার, ২৮.১৩ শতাংশ শ্রমজীবী (নীল কলার) এবং ১৩.১৩ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত।

স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্সের হটলাইন গত বছর ১৭,৩৪২টি কল হ্যান্ডল করেছে, যার মধ্যে ১১,৯৩৯টি ছিল সরাসরি সহায়তার অনুরোধ।

ওয়ং জানান, সহায়তা নেওয়া কলের মধ্যে ৫০–৫৯ বছর বয়সীদের অংশ ছিল প্রায় ১৯.৫২ শতাংশ, যদিও এই বয়সীদের আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সংস্থা খতিয়ে দেখছে – হটলাইনের সেবা এই হার কমাতে কতটা ভূমিকা রেখেছে।

তবে যেসব ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেখানে পুরুষ–নারীর অনুপাত ছিল ৩৫ বনাম ৬৫। ওয়ং বলেন, “এটি আত্মহত্যার হারের উল্টো ছবি। এতে বোঝা যায়, পুরুষরা সমস্যায় পড়লে তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করতে চায় না।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, আত্মহত্যা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ নিয়ে সমাজের লজ্জা বা ট্যাবু। যারা এমন চিন্তা করেন বা চেষ্টা করেছেন, তারা খুব কমই সাহায্য চান।”

The Samaritan Befrienders Hong Kong - Wikipedia

মধ্যবয়সীদের জন্য বিশেষ উদ্বেগ

স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্সের সুইসাইড ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন সেন্টারের প্রধান ওয়াই চোই-কি জানান, মধ্যবয়সীদের মধ্যে সহায়তা চাওয়ার হার কমে যাওয়া আরও উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কেন্দ্রটি ৫৫৮টি কেস হ্যান্ডল করেছে, যার মধ্যে ২০০ জন ছিলেন পুরুষ। এর মধ্যে ৪১টি কেস সরাসরি অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ওয়াই জানান, এই ৪১ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ছিলেন মধ্যবয়সী পুরুষ – যা ইঙ্গিত করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় তাদের মানসিক চাপ ও নেতিবাচক চিন্তার মাত্রা বেশি।

তিনি বলেন, “যারা আত্মহত্যার সঙ্কটে আছেন বা এমন চিন্তা করছেন, তাদের যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা নেওয়া উচিত।”

জনপ্রিয় সংবাদ

চন্দনা নদী: গোপালগঞ্জের জীবনরেখা, স্মৃতি, সংগ্রাম ও স্বপ্ন

হংকংয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ

১০:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

হংকংয়ে ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করেছেন ১,১৩৮ জন – যা ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে বেশি। স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্স হংকং নামের একটি এনজিও শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থার মতে, ২০২৩ সালের তুলনায় আত্মহত্যার সংখ্যা প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। তারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার এবং প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

আত্মহত্যার হারে রেকর্ড উর্ধ্বগতি

সংস্থার চেয়ারম্যান হেইম্যান্স ওয়ং হন-চি জানিয়েছেন, গত বছর প্রতি লাখ জনে আত্মহত্যার হার ছিল ১৫.১ – যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন।

Suicide prevention in Hong Kong: pushing boundaries while building bridges  - The Lancet Regional Health – Western Pacific

বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ৩০–৩৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে হার ১৯.০৫ থেকে বেড়ে ২৪.৩৮ হয়েছে। ৪০–৪৯ বছর বয়সীদের হার ২২.০৬ থেকে বেড়ে ২৭.৪৬ এ পৌঁছেছে।

ওয়ং বলেন, “পুরুষরা অর্থনৈতিক চাপ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। এ ছাড়া এই বয়সী পুরুষদের ঘাড়ে পরিবার চালানোর দায়িত্বও থাকে, যা মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।”

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় কারণ

ওয়ং জানিয়েছেন, গত বছরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। “আমরা চাই মানুষ বুঝুক – আত্মহত্যা জীবনের সমস্যার সমাধান নয়,” বলেন তিনি।

“অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সহজ নয়, তবে জীবনের বেশির ভাগ সমস্যা সাময়িক। এই সময়টা পার করে গেলে নতুন করে আশার আলো দেখা যায়। আমরা চাই, যারা কঠিন সময় পার করছেন, তাদের পাশে থাকতে।”

সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে পুরুষরা পিছিয়ে

Hong Kong recorded 1,138 suicides last year, highest number since 2003 |  South China Morning Post

২০২৪ সালে আত্মহত্যা করা ১,১৩৮ জনের মধ্যে ৭৬২ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৩৭৬ জন নারী। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৭.৫ শতাংশ ছিলেন বেকার, ২৮.১৩ শতাংশ শ্রমজীবী (নীল কলার) এবং ১৩.১৩ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত।

স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্সের হটলাইন গত বছর ১৭,৩৪২টি কল হ্যান্ডল করেছে, যার মধ্যে ১১,৯৩৯টি ছিল সরাসরি সহায়তার অনুরোধ।

ওয়ং জানান, সহায়তা নেওয়া কলের মধ্যে ৫০–৫৯ বছর বয়সীদের অংশ ছিল প্রায় ১৯.৫২ শতাংশ, যদিও এই বয়সীদের আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সংস্থা খতিয়ে দেখছে – হটলাইনের সেবা এই হার কমাতে কতটা ভূমিকা রেখেছে।

তবে যেসব ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেখানে পুরুষ–নারীর অনুপাত ছিল ৩৫ বনাম ৬৫। ওয়ং বলেন, “এটি আত্মহত্যার হারের উল্টো ছবি। এতে বোঝা যায়, পুরুষরা সমস্যায় পড়লে তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করতে চায় না।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, আত্মহত্যা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ নিয়ে সমাজের লজ্জা বা ট্যাবু। যারা এমন চিন্তা করেন বা চেষ্টা করেছেন, তারা খুব কমই সাহায্য চান।”

The Samaritan Befrienders Hong Kong - Wikipedia

মধ্যবয়সীদের জন্য বিশেষ উদ্বেগ

স্যামারিটান বেফ্রেন্ডার্সের সুইসাইড ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন সেন্টারের প্রধান ওয়াই চোই-কি জানান, মধ্যবয়সীদের মধ্যে সহায়তা চাওয়ার হার কমে যাওয়া আরও উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কেন্দ্রটি ৫৫৮টি কেস হ্যান্ডল করেছে, যার মধ্যে ২০০ জন ছিলেন পুরুষ। এর মধ্যে ৪১টি কেস সরাসরি অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ওয়াই জানান, এই ৪১ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ছিলেন মধ্যবয়সী পুরুষ – যা ইঙ্গিত করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় তাদের মানসিক চাপ ও নেতিবাচক চিন্তার মাত্রা বেশি।

তিনি বলেন, “যারা আত্মহত্যার সঙ্কটে আছেন বা এমন চিন্তা করছেন, তাদের যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা নেওয়া উচিত।”