সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা (শিল্পের জন্য) এবং ৩১.৫০ টাকা থেকে ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ বিদ্যুত্কেন্দ্রের জন্য) নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে শিল্প ও বিনিয়োগক্ষেত্রে উথালপাতাল দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান গ্রাহকরাও নির্ধারিত ঊর্ধ্বকরণের অর্ধেক লোড ব্যবহারের পর একই হারে গ্যাস পাবেন, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বর্তমান মূল্যনীতিতে আমদানি ও বিতরণের দুই স্তরেই ভ্যাট আরোপিত হওয়ায় উৎপাদন খরচে দ্বিগুণ চাপ পড়েছে। অপরদিকে গ্যাস সিস্টেম লসে এতাংশ অপচয় অগ্রাহ্য রেখে ভর্তুকি দেয়ার নামে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। BERC-এর তথ্য অনুযায়ী সিস্টেম লস ১৩.৫৩ শতাংশ, অথচ আনুষ্ঠানিক হিসেবে মাত্র ১.১২ শতাংশ দেখানো হচ্ছে; এ ফাঁক মেটাতে পারলে প্রতিবছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা অপচয় রোধ করা যেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগন।
প্রাইভেট বিনিয়োগের জিডিপিতে অংশ কমছে—২০২১–২২ সালে ২৪.৫২ থেকে ২০২৩–২৪ সালে নেমে এসেছে ২৩.৯৬ শতাংশে। একই সময়ে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ প্রথম ছয় মাসে মাত্র ২১৩ মিলিয়ন ডলার, যা এক বছরে ৭৪৪ মিলিয়নের থেকে ব্যাপক হ্রাস নির্দেশ করে। বেসরকারি খাতের ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে ছিল মাত্র ৬.৮২ শতাংশ, যা গত দশ বছরের সর্বনিম্ন; একই সময়ে মূলধনী যন্ত্রাংশের আমদানি প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে।
শক্তি নিরাপত্তার অভাব বিনিয়োগ পরিবেশকে অনুকূলে পরিণত হতে বাধাগ্রস্ত করছে। গ্যাসজোগানের নিয়মিত পতন এবং ২০৩০ সালে এলএনজি নির্ভরতা ৭৫ শতাংশে পৌঁছানোর প্রবণতা শিল্পভোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর পুনরাবৃত্ত সংযোজনমূল্যের বৃদ্ধি কর্মসংস্থান, আয় ও তরুণ প্রজন্মের সুযোগ ক্ষুণ্ন করছে।
এককীকৃত ভ্যাট কাঠামো, সিস্টেম লসের স্বচ্ছ হিসাব, দেশীয় গ্যাস আবিষ্কারের ত্বরান্বিত পদক্ষেপ এবং বণ্টন খাতে অপচয় কমানোই সমস্যা সমাধানের মূল নীতিমালা। ন্যায্য মূল্যনীতি এবং শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। সরকারকে দ্রুত গ্রিড অপটিমাইজেশন, ভ্যাট পুনর্বিন্যাস এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল কার্যকরভাবে ব্যবহারসহ সংশ্লিষ্ট আইন-নীতি সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে; নয়ত দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখীন হবে।