০১:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সরকারের স্বাগত, পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস গাজীপুরে জাসাস নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

সিঙ্গাপুরের রাজনীতি: নির্বাচনের পর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

  • Sarakhon Report
  • ০৪:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • 279

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বনাম নেতৃত্বে রূপান্তর

সিঙ্গাপুরে পিএপি ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে শাসন করছে। এই দীর্ঘ শাসনকাল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হলেও একটি “দল-নির্ভর” শাসনব্যবস্থার ঝুঁকিও তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের নির্বাচনে দলটি আবারও শক্তিশালী ম্যান্ডেট পেলেও চ্যালেঞ্জ এসেছে ভেতর থেকে — নেতৃত্বে প্রজন্মান্তরের পরিবর্তন।

আন্তর্জাতিক তুলনা:

  • জাপানে এলডিপি (Liberal Democratic Party) দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করলেও তরুণ প্রজন্মের দাবি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা দলটিকে নীতিগত সংস্কারে বাধ্য করেছে।
  • মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিনের বারসান ন্যাশনাল শাসনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল নেতৃত্বের দুর্বলতা ও জনঅসন্তোষের কারণে।

সিঙ্গাপুর যদি দক্ষ নেতৃত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে দলীয় একনায়কত্বের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে দলটির কর্তৃত্বমূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সরকারপ্রধানদের দায়

মন্ত্রী শানমুগাম স্বীকার করেছেন, সিঙ্গাপুর বর্তমানে এক ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ’ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে, বিনিয়োগ থমকে গেছে, বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি কমেছে।

সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি নির্ভর করে:

  • বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য
  • ফাইন্যান্স ও প্রযুক্তিখাত
  • বিদেশি বিনিয়োগ এবং অভিবাসনভিত্তিক শ্রমবাজার

এই তিনটি খাতই বর্তমানে চাপের মুখে।

আন্তর্জাতিক তুলনা

  • দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থনৈতিক মন্দার সময় সরকার কর্মসংস্থান-ভিত্তিক প্রণোদনা ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
  • আয়ারল্যান্ড ও ইসরায়েল দক্ষ শ্রম ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গঠনে শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে বাজেট বাড়িয়েছে।

সিঙ্গাপুর যদি সময়োপযোগী পুনঃবিন্যাস না করে, তবে তার অর্থনৈতিক মডেল বাধাগ্রস্ত হবে।

তরুণ প্রজন্ম ও নীতিগত বিকেন্দ্রীকরণ

নতুন চার এমপি নিয়ে পিএপি যে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে এক ধরণের ‘পরীক্ষা’। এই তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও জনসম্পৃক্ততা কতটা রয়েছে, তা সময়ই বলবে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন ডিজিটাল স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, কর্মসংস্থান, পরিবেশ ইস্যু, ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে সংবেদনশীলতা বেড়েছে। এটি রাজনৈতিক আস্থার কেন্দ্রও বদলে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক তুলনা:

  • ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে তরুণ নেতৃত্ব পরিবেশনীতি ও ডিজিটাল সুশাসনকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
  • ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে তরুণ ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পিএপি যদি তরুণ প্রজন্মের দাবি বুঝে নীতিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ ও অংশগ্রহণমূলক শাসন নিশ্চিত না করে, তবে এটি বিরোধীদের রাজনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্র খুলে দেবে।

সিঙ্গাপুর কোন পথে?

২০২৫ সালের নির্বাচন পিএপি’র জন্য আরেকটি বিজয় হলেও এটি একটি ‘সংকেত নির্বাচন’ — নেতৃত্বে রূপান্তর, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার যুগপৎ উত্থান।

পিএপি যদি দক্ষতা, সততা এবং যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে এটি আগামী দশকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। অন্যথায়, বিরোধীদের রাজনৈতিক বিকাশের সূচনাও এখান থেকেই হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ

সিঙ্গাপুরের রাজনীতি: নির্বাচনের পর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

০৪:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বনাম নেতৃত্বে রূপান্তর

সিঙ্গাপুরে পিএপি ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে শাসন করছে। এই দীর্ঘ শাসনকাল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হলেও একটি “দল-নির্ভর” শাসনব্যবস্থার ঝুঁকিও তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের নির্বাচনে দলটি আবারও শক্তিশালী ম্যান্ডেট পেলেও চ্যালেঞ্জ এসেছে ভেতর থেকে — নেতৃত্বে প্রজন্মান্তরের পরিবর্তন।

আন্তর্জাতিক তুলনা:

  • জাপানে এলডিপি (Liberal Democratic Party) দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করলেও তরুণ প্রজন্মের দাবি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা দলটিকে নীতিগত সংস্কারে বাধ্য করেছে।
  • মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিনের বারসান ন্যাশনাল শাসনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল নেতৃত্বের দুর্বলতা ও জনঅসন্তোষের কারণে।

সিঙ্গাপুর যদি দক্ষ নেতৃত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে দলীয় একনায়কত্বের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে দলটির কর্তৃত্বমূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সরকারপ্রধানদের দায়

মন্ত্রী শানমুগাম স্বীকার করেছেন, সিঙ্গাপুর বর্তমানে এক ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ’ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে, বিনিয়োগ থমকে গেছে, বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি কমেছে।

সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি নির্ভর করে:

  • বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য
  • ফাইন্যান্স ও প্রযুক্তিখাত
  • বিদেশি বিনিয়োগ এবং অভিবাসনভিত্তিক শ্রমবাজার

এই তিনটি খাতই বর্তমানে চাপের মুখে।

আন্তর্জাতিক তুলনা

  • দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থনৈতিক মন্দার সময় সরকার কর্মসংস্থান-ভিত্তিক প্রণোদনা ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
  • আয়ারল্যান্ড ও ইসরায়েল দক্ষ শ্রম ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গঠনে শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে বাজেট বাড়িয়েছে।

সিঙ্গাপুর যদি সময়োপযোগী পুনঃবিন্যাস না করে, তবে তার অর্থনৈতিক মডেল বাধাগ্রস্ত হবে।

তরুণ প্রজন্ম ও নীতিগত বিকেন্দ্রীকরণ

নতুন চার এমপি নিয়ে পিএপি যে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে এক ধরণের ‘পরীক্ষা’। এই তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও জনসম্পৃক্ততা কতটা রয়েছে, তা সময়ই বলবে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন ডিজিটাল স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, কর্মসংস্থান, পরিবেশ ইস্যু, ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে সংবেদনশীলতা বেড়েছে। এটি রাজনৈতিক আস্থার কেন্দ্রও বদলে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক তুলনা:

  • ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে তরুণ নেতৃত্ব পরিবেশনীতি ও ডিজিটাল সুশাসনকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
  • ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে তরুণ ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পিএপি যদি তরুণ প্রজন্মের দাবি বুঝে নীতিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ ও অংশগ্রহণমূলক শাসন নিশ্চিত না করে, তবে এটি বিরোধীদের রাজনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্র খুলে দেবে।

সিঙ্গাপুর কোন পথে?

২০২৫ সালের নির্বাচন পিএপি’র জন্য আরেকটি বিজয় হলেও এটি একটি ‘সংকেত নির্বাচন’ — নেতৃত্বে রূপান্তর, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার যুগপৎ উত্থান।

পিএপি যদি দক্ষতা, সততা এবং যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে এটি আগামী দশকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। অন্যথায়, বিরোধীদের রাজনৈতিক বিকাশের সূচনাও এখান থেকেই হতে পারে।