সারাক্ষণ রিপোর্ট
ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ
পাকিস্তান সোমবার (৫ মে) ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ফাতাহ সিরিজ’ ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সফল প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এই উৎক্ষেপণ “Ex Indus” সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়।
উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তি যাচাই ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করা
আইএসপিআর জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য ছিল সেনা সদস্যদের প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রটির উন্নত নেভিগেশন ব্যবস্থা ও নির্ভুলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলো নিশ্চিত করা। এতে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কৌশলগত সংস্থার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান ও চিফ অব জয়েন্ট চিফসের শুভেচ্ছা
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ও জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্য, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান। আইএসপিআর জানায়, তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি উৎক্ষেপণের সাফল্যে দেশবাসী, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান। তিনি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে নিরাপত্তা বাহিনী ও গবেষকদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও প্রস্তুতির প্রশংসা করে বলেন, এই উৎক্ষেপণের সফলতা প্রমাণ করে দেশের প্রতিরক্ষা সুরক্ষিত হাতে রয়েছে।
আবদালি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও সম্পন্ন
এর আগে শনিবার পাকিস্তান ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ‘আবদালি’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছিল। এছাড়া গত বছরের মে মাসে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ফাতাহ-২ গাইডেড রকেট সিস্টেমের পরীক্ষাও হয়েছিল, যেটি নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম এবং শত্রুপক্ষের অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে।
কাশ্মীর হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে একটি ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। ভারত এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে সীমান্ত পারের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়, যদিও কোনো প্রমাণ পেশ করেনি। পাকিস্তান এই অভিযোগ নাকচ করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়।
এই ঘটনার পর সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যায়। পাকিস্তান সম্ভাব্য আক্রমনের আশঙ্কায় সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায় এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে “অপারেশনাল ফ্রিডম” দেন। ২৫ এপ্রিল থেকে আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) বরাবর এক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় গোলাবর্ষণের জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়।
গোপন ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা বার্তা
গতকাল আইএসপিআরের ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এবং তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ইসলামাবাদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এক গোপন বৈঠকে অবহিত করেন।
পিটিভি নিউজের উদ্ধৃতি অনুযায়ী, আইএসপিআরের ডিজি বলেন, “যদি পাকিস্তানের ওপর আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিরক্ষা বাহিনী জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি কূটনৈতিক অঙ্গনে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও দেশের অবস্থানও তুলে ধরেন।
এই উৎক্ষেপণ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।