০৬:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা লুভ্র মিউজিয়ামে চাঞ্চল্যকর চুরি—মূল লক্ষ্য ছিল না শিল্পকর্ম, বরং মূল্যবান রত্ন ও ধাতু তালেবান শাসনে আফগান গায়িকা নাগমার দৃঢ় কণ্ঠে স্বাধীনতার আহ্বান আমেরিকান তেল কোম্পানি শেভরনের হাত ধরে টিকে আছে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ—গাজীপুরে ঘণ্টাব্যাপী যানজট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আইআরআই’র বৈঠকঃ জিএম কাদেরের স্পষ্ট বার্তা—‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়’ চাকরি, ঋণ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জেনারেশন জেডের আর্থিক লড়াই বিজ্ঞানীদের সামনে অ্যালঝেইমার প্রতিরোধের নতুন দিগন্ত লেরমো দেল তোরোর নতুন ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’—অস্তিত্ব, ঈশ্বর ও সৃষ্টির দ্বন্দ্বে এক মানবিক চলচ্চিত্র রাজনীতির কিংবদন্তী ও ইতিহাসের কণ্ঠস্বর তোফায়েল আহমেদের শুভ জন্মদিনে সংগ্রামী শুভেচ্ছা

ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে মার্কিন বিনিয়োগ: একটি কৌশলগত চুক্তির পটভূমি

  • Sarakhon Report
  • ১২:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • 138

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুদ্ধ থামেনিতবুও চুক্তি

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন অতিক্রম করেও ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারেননি, যদিও প্রথম দিনেই যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার আত্মসমর্পণ দাবি আর ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার অবস্থান এখনো মেলেনি।

তবে সাম্প্রতিক এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেয়েছে এবং দুই দেশ যৌথভাবে একটি পুনর্গঠন তহবিল গঠন করবে।

চুক্তির মূল বিষয় ও লক্ষ্য

এই নতুন চুক্তিটি আগের খসড়াগুলোর মতো নয়। আগের মতো ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক সহায়তার অর্থ ফেরত দিতে হবে না—যা ট্রাম্প আগে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বলে ভুল গণনা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে জানান, “এই চুক্তি রাশিয়াকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনের পক্ষে।”

তবে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইলেও তা এখনো পায়নি।

যৌথ তহবিল ও খনিজ খাত

চুক্তির পুরো বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে, নতুন এই বিনিয়োগ তহবিল হবে ৫০-৫০ মালিকানাভিত্তিক এবং অর্থায়ন হবে খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের নতুন লাইসেন্স থেকে আসা আয় দিয়ে।

তহবিল থেকে যে মুনাফা আসবে, তা প্রথম ১০ বছর ইউক্রেনেই পুনঃবিনিয়োগ করা হবে। এতে বিরল খনিজ পদার্থ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হবে—যার প্রতি ট্রাম্পের বিশেষ আগ্রহ আছে।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: বার্তা ও প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় রোমে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এক বৈঠক হয়। ছবিতে দুজনকে সমান মর্যাদায় আলাপে দেখা গেছে।

জেলেনস্কি সেখানে ট্রাম্পকে জানান—ইউক্রেন নির্ধারিত শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, কিন্তু রাশিয়া নয়। তাই ট্রাম্প যেন এমন একটি শান্তি উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা কেবল তিনিই বাস্তবায়ন করতে পারেন।

বৈঠকের পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানান, তিনি বার্তাটি বুঝেছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান

রাশিয়া ট্রাম্পের অবস্থানে হতাশ হয়েছে। ৯ মে বিজয় দিবস ঘিরে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও যুক্তরাষ্ট্র তা গুরুত্ব দেয়নি। ২৪ এপ্রিল কিয়েভে উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হওয়ায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, “শুরুতে ট্রাম্প জেলেনস্কিতে বিরক্ত ছিলেন, এখন তা বদলে পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।”

ইউক্রেন এই সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা লিখেছেন, “যদি রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করুক—৮ মে কেন অপেক্ষা?”

আলোচনার অবস্থা ও রাশিয়ার চাহিদা

রাশিয়া এখন সরাসরি জেলেনস্কি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি মেনে নিচ্ছে, যা আগে অবৈধ বলত। কিন্তু এর পাশাপাশি তারা আরও কঠিন অবস্থান নিয়েছে।

২৮ এপ্রিল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া তার দখল করা চারটি অঞ্চলের পূর্ণ স্বীকৃতি চায় এবং ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও “নাজিমুক্তি”-র মতো পুরনো শর্ত আবার তোলা হয়েছে।

বিশ্লেষণ: ভবিষ্যৎ শান্তি কীভাবে নির্ভর করছে

রাশিয়ার এই কৌশলগত শক্ত অবস্থান সম্ভবত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস থেকেই এসেছে। তবে ট্রাম্পের শান্তিচুক্তি চাওয়ার প্রবল ইচ্ছা একে বিপদে ফেলতেও পারে।

তবু বলা যাচ্ছে না যে রাশিয়ার খেলা শেষ। অতীতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা “চতুর” ও বিতর্কিত বাণিজ্যিক চুক্তি করে সুফল নিয়েছে। পুতিন বুঝেন, ট্রাম্পকে আলোচনায় রাখা জরুরি—যদি কিছু না-ও হয়, অন্তত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ থাকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা

ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে মার্কিন বিনিয়োগ: একটি কৌশলগত চুক্তির পটভূমি

১২:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুদ্ধ থামেনিতবুও চুক্তি

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন অতিক্রম করেও ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারেননি, যদিও প্রথম দিনেই যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয়। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার আত্মসমর্পণ দাবি আর ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার অবস্থান এখনো মেলেনি।

তবে সাম্প্রতিক এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেয়েছে এবং দুই দেশ যৌথভাবে একটি পুনর্গঠন তহবিল গঠন করবে।

চুক্তির মূল বিষয় ও লক্ষ্য

এই নতুন চুক্তিটি আগের খসড়াগুলোর মতো নয়। আগের মতো ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক সহায়তার অর্থ ফেরত দিতে হবে না—যা ট্রাম্প আগে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বলে ভুল গণনা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে জানান, “এই চুক্তি রাশিয়াকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনের পক্ষে।”

তবে ইউক্রেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইলেও তা এখনো পায়নি।

যৌথ তহবিল ও খনিজ খাত

চুক্তির পুরো বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে, নতুন এই বিনিয়োগ তহবিল হবে ৫০-৫০ মালিকানাভিত্তিক এবং অর্থায়ন হবে খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের নতুন লাইসেন্স থেকে আসা আয় দিয়ে।

তহবিল থেকে যে মুনাফা আসবে, তা প্রথম ১০ বছর ইউক্রেনেই পুনঃবিনিয়োগ করা হবে। এতে বিরল খনিজ পদার্থ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হবে—যার প্রতি ট্রাম্পের বিশেষ আগ্রহ আছে।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: বার্তা ও প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় রোমে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এক বৈঠক হয়। ছবিতে দুজনকে সমান মর্যাদায় আলাপে দেখা গেছে।

জেলেনস্কি সেখানে ট্রাম্পকে জানান—ইউক্রেন নির্ধারিত শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, কিন্তু রাশিয়া নয়। তাই ট্রাম্প যেন এমন একটি শান্তি উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা কেবল তিনিই বাস্তবায়ন করতে পারেন।

বৈঠকের পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানান, তিনি বার্তাটি বুঝেছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান

রাশিয়া ট্রাম্পের অবস্থানে হতাশ হয়েছে। ৯ মে বিজয় দিবস ঘিরে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও যুক্তরাষ্ট্র তা গুরুত্ব দেয়নি। ২৪ এপ্রিল কিয়েভে উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হওয়ায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, “শুরুতে ট্রাম্প জেলেনস্কিতে বিরক্ত ছিলেন, এখন তা বদলে পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।”

ইউক্রেন এই সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা লিখেছেন, “যদি রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করুক—৮ মে কেন অপেক্ষা?”

আলোচনার অবস্থা ও রাশিয়ার চাহিদা

রাশিয়া এখন সরাসরি জেলেনস্কি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি মেনে নিচ্ছে, যা আগে অবৈধ বলত। কিন্তু এর পাশাপাশি তারা আরও কঠিন অবস্থান নিয়েছে।

২৮ এপ্রিল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া তার দখল করা চারটি অঞ্চলের পূর্ণ স্বীকৃতি চায় এবং ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও “নাজিমুক্তি”-র মতো পুরনো শর্ত আবার তোলা হয়েছে।

বিশ্লেষণ: ভবিষ্যৎ শান্তি কীভাবে নির্ভর করছে

রাশিয়ার এই কৌশলগত শক্ত অবস্থান সম্ভবত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস থেকেই এসেছে। তবে ট্রাম্পের শান্তিচুক্তি চাওয়ার প্রবল ইচ্ছা একে বিপদে ফেলতেও পারে।

তবু বলা যাচ্ছে না যে রাশিয়ার খেলা শেষ। অতীতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা “চতুর” ও বিতর্কিত বাণিজ্যিক চুক্তি করে সুফল নিয়েছে। পুতিন বুঝেন, ট্রাম্পকে আলোচনায় রাখা জরুরি—যদি কিছু না-ও হয়, অন্তত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ থাকে।