মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে এশিয়ায় চাল সংকটের শঙ্কা: বাংলাদেশসহ বহু দেশ ঝুঁকিতে

  • Update Time : শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ৫.৫৪ এএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে এশিয়া

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও তীব্র হওয়ায় এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে যেসব দেশ চাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত শঙ্কাজনক। কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়তে পারে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে চাল সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।

কাশ্মীরের ঘটনার জেরে সামরিক উত্তেজনা

গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার জবাবে বুধবার ভারত পাকিস্তানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পাল্টা জবাবে বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানও সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই পাল্টাপাল্টি হামলা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের প্রধান রপ্তানিকারক

ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ, আর পাকিস্তান রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। শুধু চাল নয়, পেঁয়াজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যও এই দুই দেশ থেকে রপ্তানি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে। তাই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত দীর্ঘ হলে এসব পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, মূল্যও বাড়তে পারে।

বেশি ঝুঁকিতে মালয়েশিয়াসিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া

বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, কারণ তারা ভারতের চাল আমদানির ওপর নির্ভর করে। বুধবার মালয়েশিয়ার কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু জানান, সংঘাত যদি বন্দর ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশটিকে অন্য উৎস থেকে চাল খুঁজতে হবে।

বাংলাদেশ: নির্ভরশীল আমদানিকারক দেশের তালিকায়

বাংলাদেশও ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের ওপর উচ্চমাত্রায় নির্ভরশীল। স্বনির্ভর খাদ্য উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হলেও, প্রতিবছর বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে ভারত থেকেই অধিকাংশ চাল আমদানি করে থাকে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট চাল আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশ এসেছিল ভারত থেকে। বিশেষ করে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা উৎপাদন ঘাটতির সময় সরকার ভারত থেকে জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানি করে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

সম্ভাব্য প্রভাব: মূল্যবৃদ্ধি ও ঘাটতি

ভারত যদি যুদ্ধ বা বাণিজ্যিক অস্থিরতায় চাল রপ্তানি সীমিত করে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের বাজারে একাধিক ঝুঁকি দেখা দেবে—

  • চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়তে পারে
  • সরকারি গুদাম ও ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কর্মসূচির সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে
  • বিকল্প উৎস থেকে চাল আনতে বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি ঘটবে

করণীয় ও সুপারিশ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,বাংলাদেশ সরকারকে এখনই বিকল্প উৎসের দিকে নজর দিতে হবে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির কূটনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দেওয়া এবং সরকারি গুদামে নিরাপদ মজুত নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024