সারাক্ষণ রিপোর্ট
জর্ডানের প্রতিশ্রুতি ও বর্তমান পরিস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র জানিয়েছেন, জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ গাজার অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা এখন আর পূরণ করা হচ্ছে না।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে বসে বাদশাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, গাজার ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত ২,০০০ শিশুকে জর্ডানে চিকিৎসা দিতে গ্রহণ করবেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৪ জন শিশু নেয়া হয়েছে, আর এরপর থেকে তারা আর কাউকে নিচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেনেডি।
রাজনীতির কারণে চিকিৎসা বন্ধ?
জর্ডানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল যদি ওই শিশুদের চিকিৎসা শেষে গাজায় ফিরতে না দেয়, তবে তারা আর কাউকে নেবে না।
ন্যান্সি পেলোসি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বাদশাহ আব্দুল্লাহর বন্ধু, বিষয়টি নিয়ে জর্ডানের রাষ্ট্রদূত দিনা কাওয়ার-এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রদূত জানিয়ে দেন, শিশুদের গাজায় ফেরার নিশ্চয়তা না থাকলে নতুন কাউকে নেয়া সম্ভব নয়।
তবে কেনেডির মতে, বাদশাহ আব্দুল্লাহ হোয়াইট হাউসে স্পষ্টভাবে ও শর্তহীনভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। “এই শিশুরা অত্যন্ত দুর্বল, তাদের জীবনের জন্য সময় গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে দ্বিপক্ষীয় ঐক্য
এমন একটি মুহূর্তে, যখন মার্কিন রাজনীতিতে বিরোধ স্পষ্ট, তখন ট্রাম্প প্রশাসন, কেনেডি এবং ডেমোক্রেট ন্যান্সি পেলোসি—তিন পক্ষই বাদশাহ আব্দুল্লাহর উপর হতাশা প্রকাশ করছেন।
হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “জর্ডানের এমন অবস্থান অত্যন্ত দুঃখজনক। যুদ্ধ পরিস্থিতি জটিল, তবে প্রতিশ্রুতি মানা উচিত।”
ট্রাম্প, কেনেডি ও মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতি
জর্ডানের বাদশাহের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনার সময় গাজার শিশুদের গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা ট্রাম্পও গণমাধ্যমের সামনে “অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ” বলে অভিহিত করেন।
এই প্রকল্পে কাজ করছে সেন্ট জুড চিলড্রেন’স রিসার্চ হসপিটাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
কেনেডি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরু থেকেই এই বিষয়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে যুক্ত করেন এই প্রকল্পে।
কেনেডির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
কেনেডি বলেন, গাজা থেকে শিশুদের বের করে আনার বিষয়ে তিনি শুরু থেকেই জোর দিচ্ছেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে মিশর শিশুদের নিতে আগ্রহী ছিল, তবে পরে তা বন্ধ করে দেয়।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুতে এলন মাস্ক ইউএসএআইডি কার্যত বন্ধ করে দেন, তবু কেনেডির মতে, প্রকল্পটি থেমে যায়নি।
তিনি নিশ্চিত করেছেন, মার্কো রুবিও এবং স্টিভ উইটকফ সোমবার ওয়াশিংটনে বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
গাজার শিশুরা এখন রাজনৈতিক কৌশলের শিকার
ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকার ফলে শুধু মানবিক সহায়তা নয়, ক্যানসার আক্রান্ত শিশুরাও এখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক জটিলতার বলি হয়ে পড়ছে।
কেনেডি আক্ষেপ করে বলেন, “এরা এখন প্রায় মৃত্যুপ্রায়, অথচ প্রতিশ্রুত সহায়তা থেমে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা হতাশ যে, বাদশাহের ঘোষণাটি এখন জটিল রাজনৈতিক শর্তে বাঁধা। অথচ ১১ ফেব্রুয়ারির ঘোষণায় বাদশাহ বলেছিলেন, “আমরা ২,০০০ ক্যানসার ও গুরুতর অসুস্থ শিশুকে দ্রুত জর্ডানে নিয়ে যাব।”
Leave a Reply